যে কারণে ইসরায়েল জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে বাধ্য, হামাস নয়

0

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এর আগে এরকম প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিলেও এবার ভোট দান থেকে বিরত থেকেছে দেশটি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রস্তাবটি পাসের অর্থ হল ইসরায়েল তা পালন করতে বাধ্য। কিন্তু গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস তা পালন করতে বাধ্য নয়। কারণ হামাস কোনও রাষ্ট্র নয়।

নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবে সব পণবন্দীদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তার এবং তার মিত্র ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব পাসের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর আগে পণবন্দী মুক্তির সাথে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুক্ত রাখা হলেও এবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওই অবস্থান পরিত্যাগ করেছে।

এতে বলা হয়েছে, “দুঃখের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন প্রস্তাবনায় ভেটো দেয়নি।”

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা পণবন্দীদের মুক্তির প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটি হামাসকে ধারণা দিয়েছে যে তারা বন্দীদের মুক্ত না করে যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ব্যবহার করতে পারে।

ওয়াশিংটনে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতানিয়াহু, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজায় এখনও যেহেতু পণবন্দীরা আটকে রয়েছে, তাই ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে না।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে, বলেছেন, এটা আরও অনেক আগেই করা দরকার ছিল।

মনসুর বলেন, “অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাতে এই কাউন্সিলের ছয় মাস সময় লেগেছে। এরই মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও পঙ্গু হয়েছে, দুই মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত এবং দুর্ভিক্ষ হয়েছে।”

হামাস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, “তারা অবিলম্বে বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়ায় জড়িত হতে প্রস্তুত। যা উভয় পক্ষের বন্দীদের মুক্তির দিকে নিয়ে যাবে।”

সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে, বাকি ১৪ সদস্য এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে করা প্রস্তাবগুলোতে বাধা দিয়েছিল। তারা বলেছিলে যে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং পণবন্দী মুক্তির আলোচনা চলার সময়ে এই ধরনের পদক্ষেপ ভুল হবে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার তারা তাদের নিজস্ব খসড়া উত্থাপন করেছে। যাতে প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোয় ইসরায়েলের প্রতি তাদের কঠোর অবস্থান চিহ্নিত করেছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, প্রস্তাব পাস করতে দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের অর্থ ‘আমাদের নীতিতে পরিবর্তন’ নয়।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেছে কিন্তু প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। কারণ এতে হামাসের নিন্দা করা হয়নি।

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে কিরবি বলেছেন, “আমরা খুব স্পষ্ট ছিলাম, আমরা একটি পণবন্দী চুক্তির অংশ হিসেবে একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে বরাবরই আমাদের সমর্থন ছিল। এভাবেই পণবন্দী মুক্তির চুক্তি হয় এবং প্রস্তাবে সেই আলোচনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “যুদ্ধবিরতি এবং সব বন্দীর অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির জন্য এই প্রস্তাবনাটির দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।”

২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পারনকারী মার্ক লিয়াল-গ্রান্ট বিবিসি রেডিও ৪ পিএম প্রোগ্রামে বলেছেন, এই প্রস্তাবনা পাসের অর্থ ইসরায়েল এখন ‘মূলত পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ করতে একটি বাধ্যবাধকতার অধীনে থাকবে।’

তিনি যোগ করেছেন, এই প্রস্তাবনাটি আইনত ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক, কিন্তু হামাসের জন্য নয়। কারণ ফিলিস্তিনি গ্রুপটি একটি রাষ্ট্র নয়।

এর আগে, জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভেটোর ক্ষমতা ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

যাইহোক, গাজায় ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরায়েল।

হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গাজায় ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ, প্রধানত মহিলা এবং শিশু ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণ বিতরণে আরও ভূমিকা রাখার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। তারা বলছে যে সেখানকার জনগণ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে ত্রাণ সরবরাহে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছে ইসরায়েল। সূত্র : বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here