সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ১ নম্বর মাঠে চলছিল স্বাগতিক সিলেট স্ট্রাইকার্স ও দুর্দান্ত ঢাকার লড়াই। ঠিক একই সময় ২ নম্বর মাঠে অনুশীলন করছিল রংপুর রাইডার্স। ঢাকা-সিলেট দ্বৈরথের চেয়েও যেন মিডিয়াকর্মীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল রাইডার্সের অনুশীলন। সেটা অবশ্যই বিপিএলের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের জন্য।
রংপুর রাইডার্স দুর্দান্ত ফর্মে। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে এখনো ব্যাটিংয়ে দেখা যাচ্ছে না। চোখের সমস্যার কারণে কেবল বোলিং এবং ফিল্ডিং করছেন। আগের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারানোর পর ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান বলেছিলেন, টুর্নামেন্টের শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে সেরা সাকিবকে দেখা যাবে!
ব্যাটিং কোচের সঙ্গে একই সুরে কথা বললেন রাইডার্সের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ফজলে মাহমুদ রাব্বিও। তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাই প্রস্তুত হয়ে থাকেন। যদি আমাদের টিম এভাবে (দাপটের সঙ্গে) ব্যাটিং ভালো করতে থাকে তাহলে হয়তো উনি পরের দিকে নামবেন। দল ভালো করায় ব্যাটিংয়ে চাপটা কমে গেছে।’
বিপিএলের এ আসরে প্রথম তিন ম্যাচে রাইডার্সের ব্যাটিং মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। তবে শুরুর সেই ধাক্কা দ্রুতই সামলে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের দলটি। এখন রংপুরের ব্যাটিং লাইনআপ যে কোনো দলের বোলিং লাইনআপের জন্য আতঙ্ক। চার বিদেশিই দারুণ ছন্দে। পাকিস্তানের তারকা বাবর আজম বাইশগজে যেন নির্ভরতার প্রতীক। একপ্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন। দারুণ ধারাবাহিক। প্রথমদিকে সুবিধা করতে না পারলেও ফর্মে ফিরেছেন ক্যারিবিয়ন তারকা ব্রেন্ডন কিং। যদিও এই তারকাকে এখনো তার চিরাচরিত আগ্রাসি রূপে দেখা যায়নি। তবে শেষ ম্যাচে তার ছোট্ট একটি ঝলক দেখিয়েছেন। তাতেই পাওয়ার প্লেতে দাপট দেখিয়েছে রাইডার্স।
রংপুরের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে স্লগ ওভার। এখানে দুই আফগান তারকা মোহাম্মদ নবী ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই অসাধারণ। টর্নেডো গতিতে ব্যাটিং করে স্কোর লাইনটা দ্রুত বাড়িয়ে নিতে পারেন। রাইডার্সের স্থানীয় ব্যাটসম্যানরাও দুর্দান্ত। ফজলে মাহমুদ শেষ ম্যাচে ৩০ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেলেছিলেন। ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহানের মাত্র ৬ বলে ১৫ রানের ইনিংসটাও ছিল দারুণ। রাইডার্সের ব্যাটিং এতটাই চমৎকার হচ্ছে যে, সাকিবের নামারই প্রয়োজন হচ্ছে না।
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, ‘আমাদের দলটা খুবই ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যাটিংয়ের কথা বলেন, আর পেস বোলিং কিংবা স্পিন -সব বিভাগই অনেক ভালো। আমাদের ব্যাটিং লাইনআপটা এমন যে প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা অনুযায়ী যখন যাকে প্রয়োজন হয় তখন তাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়। প্রথম কয়েক ম্যাচে আগের ব্যাটিংটা ভালো হয়নি। তবে এখন খুবই চমৎকার। নিয়মিত রান হচ্ছে। আশা করছি, সামনে আমাদের ব্যাটিং খুবই ভালো হবে। মেন্টালি সবাই খুবই বুস্টআপ আছে।’
সিলেট পর্বে শেষ ম্যাচে আজ রাইডার্সের প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স। গতকাল স্বাগতিক দলটি প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে। আজ রংপুরকে হারানোর জন্যও মরিয়া। তবে কাজটি যে মোটেও সহজ নয়, তা খুব ভালো করেই জানে স্ট্রাইকার্স।
পাঁচ ম্যাচে রংপুর রাইডার্স তিন জয় পেয়েছে। তবে শেষ দুই ম্যাচে তারা দেখিয়েছে দুর্দান্ত দাপট। আজকের ম্যাচেও জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় রংপুর। ফজলে রাব্বি বলেন, ‘দল একটা ভালো মোমেন্টামে আছে। আমরা চাই জয় দিয়েই সিলেট পর্ব শেষ করতে। তখন ঢাকা পর্বটা আমাদের জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।’
যতই দিন যাচ্ছে রংপুর রাইডার্সের মাঠের পারফরম্যান্স আরও নিখুঁত হচ্ছে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই দাপট দেখাচ্ছে। তবে দলের সেরা তারকা সাকিব ব্যাট হাতে না নামায় ভক্তদের মাঝে একটা আক্ষেপ থেকেই যাচ্ছে! কে জানে, হয়তো সেই আক্ষেপটা আজই কেটে যেতে পারে!