সত্যিই কি নাইজারে অভ্যুত্থানের পেছনে রাশিয়া জড়িত?

0

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে ‘পদচ্যুত’ করার নেপথ্যে রাশিয়ার হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এই সন্দেহ প্রকাশ্যে এসেছে।

জানা গেছে, নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির ক্ষমতাসীন দলের সদর দফতরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকেই মূলত অভ্যুত্থানে রাশিয়ার জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ উঠছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের সমর্থকরা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের দলের সদর দফতরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এসময় তারা সেখানে পাথর নিক্ষেপ করে এবং গাড়িতে আগুন দেয়। এছাড়া অভ্যুত্থানের সমর্থকদের একটি ছোট অংশের হাতে রাশিয়ার পতাকাও দেখা গেছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে বুধবার রাত থেকেই আটক রাখা হয়েছে। কিন্তু তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

বুধবার সন্ধ্যায় একদল সামরিক কর্মকর্তা জাতীয় টেলিভিশন দখল এবং অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়। পরে সেনাবাহিনীও এই অভ্যুত্থানে তাদের সমর্থন দেয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপক নিন্দা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে এই অঞ্চলে ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান সহযোগী হিসেবে দেখা হয়। আর তাই বাজুমের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে অন্যান্য দেশ এবং জাতিসংঘের সাথে যোগ দিয়েছে রাশিয়াও।

৬৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ বাজুম দুই বছর আগে নাইজারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স উভয়ই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ এই দেশে অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে।

এছাড়া নাইজারে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এক ফোনালাপে বাজুমকে ওয়াশিংটনের ‘অটল সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জাতিসংঘ বলেছে, তারা নাইজারে তাদের মানবিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। স্থগিতাদেশের পেছনে কারণ হিসেবে অভ্যুত্থান ছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য জাতিসংঘ এর আগে বলেছিল, নাইজারে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আটককৃত প্রেসিডেন্ট বাজুমের ‘অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত’ মুক্তি দাবি করেছেন।

অবশ্য অভ্যুত্থানকারীরা কোনও নেতা ঘোষণা না করায় নাইজারের দায়িত্বে আসলে কে রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।

বিবিসি বলছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী নিয়ামে দোকানপাট ও বাজার খুলে দেওয়া হয় এবং ভোরে ভারী বৃষ্টির জেরে বিলম্বের পর অভ্যুত্থান সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে। এছাড়া পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে জড়ো হওয়া শতাধিক অভ্যুত্থান সমর্থকের কাছে কিছু রাশিয়ান পতাকাও ছিল।

অন্যদের কাছে থাকা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে বলা হয়, ‘ফ্রান্সের থেকে মুক্তি চাই’ এবং ‘বিদেশি ঘাঁটি চলে যাও’। পরে অভ্যুত্থান সমর্থকদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সদর দফতরে হামলা চালায়। এমনকি বিক্ষোভকারীদের আসতে দেখে বাজুমের দলীয় কর্মীরা পালিয়ে যায়।

তবে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সংঘর্ষে কিছু লোক আহত হয়েছে এবং পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো এখন পিএনডিএস তারায়া পার্টি ভবনের চারপাশে পড়ে রয়েছে।

বিবিসি বলছে, নাইজারের দু’টি প্রতিবেশী দেশ মালি এবং বুরকিনা ফাসো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। আর অভ্যুত্থানের পর উভয় দেশেই নতুন সামরিক নেতারা ফ্রান্সের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে রাশিয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন।

প্রতিবেশী দেশ মালিতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যরা জিহাদি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সে দেশের সামরিক সরকারকে সাহায্য করছে। এছাড়া ওয়াগনার গ্রুপের তৎপরতা এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে সাহেল অঞ্চলের অস্থিরতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এমনিতেই যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।

আর এর মধ্যে নাইজারের ভেতরে এই অস্থিরতা সেই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তবে বুধবারের এই সেনা অভ্যুত্থান এবং প্রেসিডেন্ট বাজুমকে উৎখাতের পেছনে রাশিয়ার জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাজুম। ফ্রান্স ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর নাইজারে চারটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। এছাড়াও অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা হয়েছে বহুবার। সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here