লালন আখড়ায় এবার একদিনের অনুষ্ঠান, অসন্তুষ্ট সাধু-বাউলরা

0

রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় কারণে এবার সংক্ষিপ্ত হচ্ছে লালন স্মরণোৎসব। তিনদিনের অনুষ্ঠান রবিবার একদিনে হওয়ায় বাদ যাচ্ছে অনেক আনুষ্ঠানিকতা। হচ্ছে না বাউল মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লালন অনুসারীদের তিনটি সেবাগ্রহণের আচারও ছোট করে রাতের মধ্যেই শেষ করা হচ্ছে।

২শ বছর আগে ফকির লালন সাঁই তার ভক্তদের জড়ো করে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ করতেন। গানে গানে তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। সেই রেওয়াজ মোতাবেক এখনো প্রতিবছর উদযাপিত হয় লালন স্মরণোৎসব। সাধারণত দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায় অধিবাসে রাখালসেবার মধ্যদিয়ে সঙ্গ শুরু করেন লালন অনুসারীরা। পরদিন সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা করা হয়ে থাকে। আর তিন দিনব্যাপী লালন একাডেমি মাঠে বাউলমেলা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবার দোল পূর্ণিমার তিথি পবিত্র রমজানে পড়ায় এসব অনুষ্ঠান কেটে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রবীণ সাধু নহির শাহ বলেন, যেহেতু প্রশাসনের মাধ্যমে লালন সাঁইজি আখড়াবাড়ি পরিচালিত হচ্ছে, অতএব প্রশাসনের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে। অসন্তোষ প্রকাশ করে নহির শাহ বলেন, আমরা মূল ভুলে নকল নিয়ে ব্যস্ত থাকছি। একদিনে তিনটি সেবা হবে না। কারণ সেবা তো সময়ান্তে হবে। সময় হাতে না পেয়ে সেবা কীভাবে হবে। এই সাধক বলেন, ২৪ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটা হওয়া উচিত ছিল। রোববার বিকেলে অধীবেশন শুরু হবে, আর পরের দিন বিকেলে অধিবেশন শেষ হবে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পূর্ণিমা তিথিটা বিরাজ করে।

লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রোববার দুপুর তিনটায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে একডেমির অডিটরিয়ামে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সন্ধ্যায় সাধু-বাউল পায়েস মুড়ি দিয়ে রাখাল সেবা দেওয়া হবে। রাতে ভাতমাছ, ডাল সবজি ও দই দিয়ে সেবা দেওয়া হবে। সাধু বাউলদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তাইজাল বলেন, রমজানের মধ্যে সাধু বাউলদের সেবা দিতে দিনের বেলায় আড়ম্বরভাবে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। সে কারণে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

শনিবার বিকেল পর্যন্ত খুব বেশি সাধু-ফকিরদের আখড়াবাড়িতে আনাগোনা দেখা যায়নি। তবে আখড়াবাড়িকে সাধু-বাউলদের জন্য প্রস্তুত করেছে লালন একাডেমি। কিছুসংখ্যক বাউল যারা এসেছেন তারা এরই মধ্যে গানে গানে লালন দর্শনের প্রচার শুরু করেছেন। রাতের মধ্যেই অনেক সাধু জড়ো হবেন বলে আশা করেছেন তারা। এবার বাউলমেলা ও লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান না হওয়ায় আখড়াবাড়ির মাঠটি অনেকটাই ফাঁকা।

কলকাতা থেকে আসা কার্তিক চন্দ্র বণিক বলেন, লালন মানবতার শিল্পী ছিলেন। তার এখানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

সাভার থেকে আসা বাউল জাহাঙ্গীর বলেন, ৮০-৮২ সালে আখড়াবাড়ির যেমন প্রকৃতিভাব দেখেছিলাম, এবার কিছুটা তেমন মনে হচ্ছে। লোকসমাগম কম হওয়ায় শান্তিমতো লালনের বাণী শ্রবণ করা যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here