মন্ত্রী হতে মাসিক ৩ কোটি বেতনের চাকরি ছাড়ছেন যিনি!

0

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৯৩ আসনে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা জয় পেলেও সরকার গঠন করতে পারেননি তারা। বরং ফলাফলে দ্বিতীয়স্থান অধিকারী পিএমএল-এন ৭৫ আসনে ও তৃতীয়স্থান অধিকারী পিপিপি ৫৪ আসনে জয় পেয়ে জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন করেছে।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন পিএমএলএন- এর শেহবাজ শরিফ। দেশটির পার্লামেন্টে আজ শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ চলছে।

জানা গেছে, বিশ্বে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের যে পাঁচজন সর্বোচ্চ র‌্যাংকের ও বেতনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম পাকিস্তানি নাগরিক মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব। তিনি মাসে বেতন পান প্রায় ৩ কোটি রুপি। আছে ডাচ নাগরিকত্ব। কিন্তু দেশের স্বার্থে তিনি এই উচ্চাভিলাসী জীবন ত্যাগ করতে রাজি। পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসা নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে নেওয়ার জন্য এসব ত্যাগ করতে যাচ্ছেন তিনি।

এরই মধ্যে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আওরঙ্গজেব। জানানো হয়েছে, নিজের দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন এরই মধ্যে করেছেন তিনি। ফলে পাকিস্তানে নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব ইসহাক দারের পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছেন, সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ডাচ নাগরিকত্ব ত্যাগের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এখনও তার মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেননি, তবু দলের প্রধান নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আওরঙ্গজেব।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অর্থ বিষয়ক প্রথম মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন শেহবাজ শরিফ। এতে যোগ দিয়েছিলেন এই ব্যাংকারও। সেই মিটিংয়ে উল্লেখ করার মতো মুখ সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার ছিলেন অনুপস্থিত। 

পিএমএলএন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইসহাক দারের অর্থমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেন্দ্রীয় সরকারের উল্লেখযোগ্য অন্য কোনও মন্ত্রণালয় তাকে দেওয়া হতে পারে।

দেশের শীর্ষ অর্থনৈতিক অবস্থানের কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব ডাচ নাগরিকত্ব ত্যাগের জন্য আইনগতভাবে আবেদন করেছেন। কারণ, পাকিস্তানি আইনের অধীনে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা কোনও ব্যক্তি সরকারি কোনও দায়িত্বে আসতে পারেন না। 

সম্ভাব্য এই অর্থমন্ত্রী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ব্যাংকারদের শীর্ষ পাঁচজনের মধ্যে অন্যতম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি হাবিব ব্যাংক লিমিটেডের (এইচবিএল) প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এইচবিএলের ২০২৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সুবিধাসহ তিনি মোট বছরে ৩৫ কোটি ২০ লাখ রুপি পেয়েছেন। এর অর্থ প্রতি মাসে তার বেতন ও অন্য সুবিধা মিলে পেতেন প্রায় ৩ কোটি রুপি। এর মধ্য দিয়ে তিনি পাকিস্তানে সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া পাঁচজন ব্যাংকারের মধ্যেও অন্যতম।

মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব এমন সময় লোভনীয় চাকরি ও দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত হচ্ছেন যখন দেশের জটিল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কিভাবে সমাধান করবেন তা অনিশ্চিত। আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাকে কি আর্থিক খাতের বিভিন্ন ইস্যুতে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হবে? সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের সঙ্গে তাকে বসতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তা তিনি কতটা দক্ষতার সঙ্গে নিপুণভাবে করেন সেদিকে দৃষ্টি থাকবে সবার। 

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, পাকিস্তানে নতুন মন্ত্রীপরিষদ গঠন হওয়ার পর স্ট্যান্ডবাই অ্যারেঞ্জমেন্ট কর্মসূচির অধীনে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করতে প্রস্তুত আইএমএফ। ওদিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে এইচবিএলের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যুক্ত আছেন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব। এর আগে তিনি জেপি মর্গানের গ্লোবাল করপোরেট ব্যাংক ইন এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিংয়ে তার আছে কমপক্ষে ৩০ বছরের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। তিনি আমস্টারডাম ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এবিএন এএমআরও এবং আরবিএস-এ দায়িত্ব পালন করেছেন। মুহাম্মদ আওরঙ্গ দ্য ওয়ার্টন স্কুল (ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়া) থেকে বিএস এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এইচবিএলের চেয়ারম্যান সুলতান আলি অ্যালানার অধীনে তিনি কাজ করছেন। সূত্র: দ্য নিউজ, জিও নিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here