নিজের মাটি থেকে ইসরায়েলে হামলার কতটুকু সক্ষমতা আছে ইরানের?

0

ইসরায়েলে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। এরই মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলের মাটিতে সরাসরি হামলা চালাতে ইরান শতাধিক ড্রোন ও কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রস্তুত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেকোনও সময় ইসরায়েলের মাটিতে হামলা চালাতে পারে ইরান।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাস প্রাঙ্গণে হামলা হয়। ওই হামলায় ইরান রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কমান্ডারসহ সাত কর্মকর্তা নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয় ইরান। যদিও ইসরায়েল ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, খুব শিগগিরই নিজের মাটি থেকে সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালাবে ইরান। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়- ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হামলা হতে পারে। 

নিজের মাটিতে ইসরায়েলের মাটিতে হামলার কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে ইরানের?

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ এর খবর অনুযায়ী, ইরান থেকে নিক্ষেপ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে সময় নেবে ১২ মিনিট, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সময় লাগবে দুই ঘণ্টা এবং ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলের মাটিতে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সময় লাগবে ৯ ঘণ্টা।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরের মার্কিন অফিসের মতে, ইরান এই মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী।

ইরানের আধা-সরকারি নিউজ আউটলেট আইএসএনএ চলতি সপ্তাহে গ্রাফিক প্রকাশ করে, তাতে ৯ ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয়েছে যেগুলো ইসরায়েলে পৌঁছতে পারবে।

যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছতে সক্ষম

১. খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্র (খাইবার)
পাল্লা: ২ হাজার কিমি
দৈর্ঘ্য: ১৩ মিটার
ব্যাস: ১.৫ মিটার
ওজন: ৩০ টন
ওয়ারহেড ওজন: ১৫০০ কেজি
গতি: বায়ুমণ্ডলের বাইরে ১৬ ম্যাক/ বায়ুমণ্ডলের ভিতরে ৮ ম্যাক

২. হাজী কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১৪০০ কিমি
দৈর্ঘ্য: ১১ মিটার
ব্যাস: ৮৫ থেকে ৯৫ সেমি

ওজন: ৭ টন
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ৫ ম্যাক

৩.খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১৪৫০ কিমি
দৈর্ঘ্য: ১০.৫ মিটার
ব্যাস: ৮০০ মিমি
ওজন: ৪৫০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ঘণ্টায় ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি

৪. সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ২,০০০ থেকে ২,৫০০কিমি
দৈর্ঘ্য: ১৭.৫৭ মিটার
ব্যাস: ১.২৫ মিটার
ওজন: ২৩ টন
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজির বেশি
গতি: ১২ থেকে ১৪ ম্যাক

৫: পাভে ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১,৬৫০ কিমি
উড়ন্ত উচ্চতা: ৫০ মিটারের কম
গতি: ৬০০থেকে ৯০০ কিমি/ঘন্টা

৬: ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১,৪০০ কিলোমিটারের বেশি
দৈর্ঘ্য: ১২ মিটার
ব্যাস: প্রথম অংশ:৮০ সেমি / দ্বিতীয় অংশ: ৫০ সেমি
ওজন: ৩,৫০০থেকে ৪,১০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ৫ ম্যাক

৭. কদর ক্ষেপণাস্ত্র (ট্রিপল)
পাল্লা: ১,৯৫০ কিমি পর্যন্ত
দৈর্ঘ্য: ১৫.৫ থেকে ১৬.৫মিটার
ব্যাস: ১.২৫ মিটার
ওজন: ১৭,৪৮০ কেজি পর্যন্ত
ওয়ারহেড ওজন: ৭০০ থেকে ১০০০ কেজি
গতি: প্রায় ৯ ম্যাক

৮. এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: প্রায় ১,৭০০ কিমি
দৈর্ঘ্য: ১৫.৫ মিটার
ব্যাস: ২.১৮ মিটার
ওজন: ১,৭৫০ কেজি

৯. শাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার
দৈর্ঘ্য: প্রায় ১৬ মিটার
ব্যাস: ১.২ মিটার
ওজন: ১,৭৮০ কেজি

এছাড়াও ইরানের রয়েছে ড্রোন সক্ষমতা। বর্তমান বিশ্বে ইরান অন্যতম শীর্ষ উৎপাদক। গত আগস্টে দেশটি দাবি করে, তারা মোহাজের-১০ নামে একটি উন্নত ড্রোন তৈরি করেছে, যার অপারেশনাল রেঞ্জ ২০০০ কিলোমিটার  এবং ৩০০ কেজি পর্যন্ত পেলোড-সহ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম।

ইরান দাবি করেছে, তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য সম্ভাব্য আঞ্চলিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা। 

গত জুনে ইরান দাবি করে দেশটি দেশীয়ভাবে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। হাইপারসনিক মিসাইল শব্দের গতির চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ দ্রুত এবং জটিল গতিপথে উড়তে পারে। ফলে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো কঠিন। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here