ডেঙ্গু প্রতিরোধে দরকার সচেতনতা

0

ডেঙ্গু একটা শহুরে রোগ। ঢাকা শহর ও শহরতলীতে রোগটা এখন চিরস্থায়ী বাসা বেঁধেছে। ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। বাঁচতে হলে, জানতে হবে, সচেতন হতে হবে। আমরা সবাই জানি ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু রোগীর রক্ত পান করেছে এমন মশার কামড়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে। এডিস মশার লার্ভা জলাবদ্ধ পানিতে বংশবিস্তার করে থাকে। 

শরীরের ভিতরে ভাইরাসটি দ্বিতীয় দিন থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত দ্রুত বংশবিস্তার করতে থাকে। রোগী সাধারণত উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগের কথা বলেন। কিছু রোগী বমি, পেটে ব্যথা বা পাতলা পায়খানা নিয়েও আসতে পারেন। চতুর্থ বা পঞ্চম দিন থেকে জ্বর সাধারণত কমে আসে এবং সপ্তম বা অষ্টম দিনে রোগী অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। অবশ্য শারীরিক দুর্বলতা আরও কিছুদিন থাকতে পারে।
 
যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন তা হলো ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে শারীরিক ব্যথার একটা নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। এই ব্যথার কারণেই আমরা অনেক সময় অসহ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খাই। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে এটা কোনোভাবেই করা যাবে না। ব্যথার ওষুধগুলো ডেঙ্গু রোগীর রক্তপাতের সম্ভাবনাকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়।

১০০ ডেঙ্গু রোগেীর মধ্যে একজন বা দুজন রোগীর  প্রকৃত অর্থে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যেমন –

১। যদি রোগীর রক্তচাপ আশংকাজনকভাবে কমে আসে, মানে হাইপোটেনশন ডেভেলপ করে। ডেঙ্গু রোগীর রক্তনালির ভিতরের রক্তের পানি অংশটুকু রক্তনালি থেকে বের হয়ে আসে, এতে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ও রক্তনালিতে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এই হাইপোটেনশন কিডনি, লিভার, হার্ট এবং ব্রেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলশ্রুতিতে মাল্টি অর্গান ফেইলর ডেভেলপ করে রোগী মারা যেতে পারেন। 

২। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে সামান্য রক্তপাত গ্রহণযোগ্য। রক্তের অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে রক্তপাত ঘটে। ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণের একটা প্রধান লক্ষ্য থাকে শরীরের অনুচক্রিকা। স্বাভাবিকভাবে আমাদের শরীরে অনুচক্রিকার পরিমাণ ১,৫০,০০০-৩,৫০,০০০ ডেসিলিটার রক্তে। ডেঙ্গু জ্বরে অনুচক্রিকার পরিমাণ কমতে থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ২০ থেকে ১০ হাজারেও নেমে আসতে পারে। একটা সময় অনুচক্রিকা কমা থেমে যায় এবং তারপর আস্তে আস্তে পুনরায় তা বাড়তে থাকে। ডেঙ্গু রোগী সপ্তম বা অষ্টম দিন থেকে পুনরায় স্বাভাবিক পরিমাণ অনুচক্রিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়।

৩। খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত/অনুচক্রিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। অনুচক্রিকার পরিমাণ আশঙ্কাজনক রকম কমে গেলে, রক্তপাত বেশি হলে, হাইপোটেনশন ডেভেলপ করলে কোলয়েড সলিউশনের পাশাপাশি রক্ত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করবে।

৪। ডেঙ্গু ভাইরাস যদি শুরুতেই সরাসরি ব্রেন, কিডনি, লিভার বা হার্টকে আক্রমণ করে তবে রোগী শুরুতেই ক্রিটিকাল অবস্থায় পতিত হন। এ অবস্থা খুব কম ক্ষেত্রে ঘটে। তবে বিষয়টা আপনার বা আমার নিয়তির ওপরই নির্ভরশীল। 

ভ্যাকসিন : ডেঙ্গু ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে, তবে এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। ডেঙ্গু ভাইরাসের চার থেকে পাঁচটি সেরোটাইপ রয়েছে। এ কারণে এর ভ্যাকসিন উৎপাদন কষ্টসাধ্য। যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তারা সাধারণত বেশি রোগাক্রান্ত হন। আগে উৎপাদিত এন্টিবডি এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে না। ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন হই, সুস্থ থাকি।

লেখক: রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here