টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত আসামী গ্রেফতার!

0

আখতার রাফি :- মির্জাপুরে আজগানা গজারি বনে পাওয়া অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ সংক্রান্তে রুজু হওয়া চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও স্বল্পতম সময়ে জড়িত আসামী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মির্জাপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায় যে, গত ১৮/১১/২৩ তারিখ রাত ৮.৪৫ এর দিকে মজিদপুর, আজগানা ইউনিয়নের গজারি বনের ভেতর দিয়ে হাটুভাংগাগামী রাস্তার পাশে অজ্ঞাতনামা মহিলার রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেলে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতার সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৩০০ গজ দূরে ঘন জংগলে পরে থাকা মৃতার ব্যবহার্য ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধারের সুত্র ধরে পুলিশ মৃতার পরিচয় বের করতে সক্ষম হয়। উক্ত লাশটি নার্গিস কাওছার সাদিয়া (৪৩), পিতা-মৃত মতিউর রহমান, মাতা-মৃত নুরজাহান, সাং-নতুন বান্দুরা, মীরের ডাঙ্গী, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-ঢাকা নামে এক মহিলার বলে সনাক্ত করা হয়।

এ প্রেক্ষিতে মৃতের কণ্যা জুইয়ারিয়া জান্নাতি কুমু (২১) বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে মির্জাপুর থানার মামলা নং-১১, তারিখ-২০/১১/২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ রুজু হয়।

এজাহারে বাদী জানায় যে, তার মা নার্গিস কাওসার সাদিয়া গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ী থানাধীন আরামবাগ মিতালী ক্লাব এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। গত ১৮/১১/২৩ তারিখে বিকেল ৫.০০ ঘটিকার পর তার মা বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে পুলিশ মারফত তিনি তার মার মৃত্যুর খবর পান। বাদীর ধারনা অজ্ঞাতনামা বিবাদী/বিবাদীরা তার মা-নার্গিস কাওছার সাদিয়াকে পরিকল্পিতভাবে কৌশলে উল্লেখিত ঘটনাস্থলে এনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে চলে যায়।

উক্ত চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই এ টি এম জহিরুল ইসলামকে নিয়োগ করে জেলা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও ম্যানুয়াল ইনটেলিজেন্স কাজে লাগিয়ে মির্জাপুর থানা পুলিশ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।

মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এস. এম. মনসুর মূসা জানান যে ’’মৃতা নার্গিস গাজীপুরের কোণাবাড়িতে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতো। সেখানে কাপড় ব্যবসায়ী জনৈক হাশেমের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হাশেম ব্যবসার কথা বলে নার্গিসের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নেয়। হাশেম তার পূর্বের দেয়া কথা মতো নার্গিসকে সেই টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে। একসময় নার্গিস হাশেমকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। তখন মূলত হাশেম নার্গিসকে হত্যার পরিকল্পনা করে, এতে করে তার নার্গিসকে বিয়েও করতে হচ্ছেনা, আবার টাকাও ফেরত দিতে হচ্ছেনা। হাশেম তার সহোদর দুই ভাই হাসান ও হান্নানকে এই হত্যা পরিকল্পনায় যুক্ত করে। ঘটনার দিন বিকেল ৫.৩০ ঘটিকার সময় হাশেম মৃতা নার্গিসকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ঘুরতে ঘুরতে সে নার্গিসকে উল্লিখিত হত্যার ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো সেখানে হাশেমের দুই ভাইও মোটরসাইকেল নিয়ে উপস্থিত হয়। তখন তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়’’।

মির্জাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ রেজাউল করিম জানান যে, মামলার রহস্য উদঘাটনের পর এসআই এ টি এম জহিরুল ইসলাম ও এসআই বাশারের নেতৃত্বে মির্জাপুর থানার একটি চৌকস দল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২০/১১/২৩ তারিখে হত্যাকান্ডে জড়িত হাশেম ও হান্নানকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার এসআই এ টি এম জহিরুল ইসলাম জানান যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

মির্জাপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব গিয়াস উদ্দিন জানান যে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ঘটনাস্থলের পাশের জংগল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপর সহযোগী আসামীকে আটকের জন্য পুলিশের চিরুনী অভিযান অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

অফিসার-ইন-চার্জ রেজাউল করিম আরও জানান যে হত্যাকান্ড সংশ্লিষ্ট সকল আলামত জব্দ করা হচ্ছে। তদন্ত অব্যহত আছে। শীঘ্রই তদন্ত শেষে পুলিশ রিপোর্ট প্রেরণ করা হবে। মির্জাপুর থানা পুলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here