কংগ্রেসের ইশতেহারে ভারত-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে জোর

0

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে প্রতিবেশী মালদ্বীপের সাথে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সীমান্ত সন্ত্রাসসহ অন্য কয়েকটি ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পর কংগ্রেস কেন্দ্র ক্ষমতায় আসলে সেই মালদ্বীপের সাথে সম্পর্ক মেরামত করবে ভারত। পাশাপাশি সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধে পাকিস্তানের ইচ্ছা ও ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তার সাথেও আলোচনায় বসবে ভারত। 

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছে কংগ্রেস। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রমূখ। 

তাতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকেই পররাষ্ট্রনীতিতে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, অনেক ক্ষেত্রে, বিজেপি/এনডিএ সরকারের অধীনে পররাষ্ট্রনীতি এই ঐকমত্য থেকে বিচ্যুত ঘটেছে, বিশেষ করে চলমান গাজা সংঘর্ষের বিষয়ে। বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সংযমের কণ্ঠস্বর হিসেবে বিশ্বব্যাপী ভারতের যে খ্যাতি, তা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে কংগ্রেস অঙ্গীকার বদ্ধ। 

চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে, ভারত-চীন সীমান্তে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে। 

নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের উপরেও জোর দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ক্ষমতায় আসলে আমাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেবে কংগ্রেস। নেপাল ও ভুটানের সাথে আমরা আমাদের বিশেষ সম্পর্কের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব এবং আমাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য তাদেরকে শক্তিশালী করব। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি সর্বাধিক জনবহুল দেশ- ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতেও সচেষ্ট হব। 

ক্ষমতায় আসলে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে শ্রীলঙ্কার সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে শতাব্দি প্রাচীন দল কংগ্রেস। 

ইশতেহারে বলা হয়, আমরা দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে শ্রীলঙ্কার সাথে কাজ করব এবং শ্রীলঙ্কাকে তার রাজনৈতিক সমস্যাগুলো, বিশেষ করে তামিল সমস্যা নিরসনে সাহায্য করব। 

যদিও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অবনতির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তার বক্তব্য ভারত এবং প্রতিবেশীদেশেও এমন কিছু শক্তি আছে যারা সব সময় সমস্যা তৈরি করতে চায়। তার দাবি পাকিস্তান ও চীনকে বাদ দিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক ভালো। 

সম্প্রতি জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, ‘আমরা যদি প্রতিবেশীর কথা বলি, এবং অনুগ্রহ করে যদি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় যান এবং সেখানকার মানুষদের যদি জিজ্ঞাসা করেন যে তারা কী ভাবছেন। তাদের গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সময় কে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল? নেপালে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন আপনি কোথা থেকে আপনার ভ্যাকসিন পান, ইউক্রেনের সমস্যায় কে আপনাকে সার এবং জ্বালানী দিয়েছিল। এবং গোটা ঘটনায় আমি নিশ্চিত যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ আমাদের বিপক্ষে যাবে না। প্রতিবেশী দেশে হয়তো কিছু শক্তি আছে, তার পিছনেও আরও শক্তি আছে- যারা সমস্যা তৈরি করে। এবং ভারতেও কিছু মানুষ আছে যারা এই সমস্যাগুলোকে নিয়ে তাদের খেলা শুরু করে দেয়।’ 

এরই সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি যেমনটা বলেছি যে চীনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়। পাকিস্তানের সাথে বর্তমান সম্পর্কের অবস্থা কি তাও আপনারা সকলেই জানেন। কিন্তু এই দুই দেশকে বাদ দিয়ে, প্রতিবেশী দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়েও অনেক ভালো।’ 

নরেন্দ্র মোদির সাথে মোকাবিলা করে জনসমর্থন ফিরে পেতে গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, তরুণ, নারীদের অগ্রগতির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে। 

কংগ্রেসের এই নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে বিজেপির অভিযোগ কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে না জেনেই অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। অন্যদিকে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘কংগ্রেসের গ্যারান্টি মোদির গ্যারান্টির মতো ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়, বরং রূপায়ণযোগ্য।’ 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here