ঈদের দিনের খাবারদাবার

0

ঈদের সকালের খাবার : ঈদ-সকালের নাশতায় রুটির পাশাপাশি থাকতে পারে হালকা তেলে ভাজা পরোটা বা সবজির নরম খিচুড়ি। তার সঙ্গে মুরগির তরকারি বা ডিম ভুনা রাখা যায়। তবে সকালের খাবারকে স্বাস্থ্যকর বানাতে একটা সবজি রাখতে হবে অবশ্যই। সবশেষ মিষ্টি খাবারে থাকতে পারে স্বল্প মিষ্টিযুক্ত সেমাই, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং ইত্যাদি।

মধ্যমকাল ও বিকালের নাস্তা : ঈদের দিনে অনেকে সকাল ও দুপুরের, দুপুর ও রাতের মাঝের সময়টাতে হালকা কিছু খান। সে ক্ষেত্রে ফুচকা ছাড়া বা অল্প ফুচকা দেওয়া চটপটি খেতে পারেন। যেহেতু এখন বেশ গরম, তাই এ সময়ের সব থেকে পুষ্টিকর খাবার হলো তাজা ফল বা ফলের সালাদ। এ ছাড়া ফলের জুস, বেলের শরবত, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে, তাতে শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরি হবে না। আবার মাংস ভেজিটেবল স্যুপ, স্ট্রু এ জাতীয় খাবারও রাখা যায়।

রাতের খাবার : কেউ যদি মনে করেন, রাতে ভালো খাবার খাবেন তাহলে অবশ্যই মাংসের গ্রিল বা বারবিকিউ বা এয়ার ফ্রাই এ মাংস ঝলসে নিতে পারেন। রাতে দাওয়াতে গেলেও ভালো খাবার, আবার বাড়িতে থাকলেও ভালো খাবার তাই খাওয়ার পর একটু হেঁটে নেওয়া ভালো। বাড়িতে থাকলে মাংসের একটি স্বাস্থ্যকর পদ সঙ্গে একটি পদ

সবজি রাখতে পারেন।

এদিকে, লাল মাংস পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। লাল মাংস একটানা দীর্ঘদিন গ্রহণ ও অতিভোজনে শরীরের নানা রোগবালাই বাসা বাঁধতে পারে। প্রতিদিন একজন সুস্থ ব্যক্তি কতটুকু প্রোটিন খাবেন সেটা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির আদর্শ ওজনের উপরে। কারোরই দিনে ৭০ গ্রামের বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়। গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো সপ্তাহে দুদিন বা সপ্তাহে মোট তিন থেকে পাঁচ বেলা। প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ২-৩ টুকরার বেশি খাবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন একটানা ১০০ গ্রামের বেশি লাল মাংস খেলে হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি, বৃহদান্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি আক্ষরিক হারে বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত লাল মাংস গ্রহণে কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তের চর্বি বেড়ে যাওয়া ও গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়। লাল মাংস থাকা বিশেষ ইনফ্লামেটরি যৌগ পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। তাই মাংস খেতে হবে পরিমিত।

মাংস শুধু যে ক্ষতিকর তা নয়, এ থেকে প্রোটিন, ভিটামিন-(বি১, বি৩, বি৬ ও বি১২), জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন ভালো পরিমাণে পাওয়া যায়। এই পুষ্টি উপাদানগুলোর স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও অনেক।

সব খাবার থেকে উপকার পেতে হলে অবশ্যই রান্নার করার ক্ষেত্রে, খাবার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ও পরিমাণ কতটুকু হবে সে বিষয়ে কিছু নিয়ম মানা জরুরি। যেমন : মাংস রান্নায় দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে। কম তেলে রান্না করতে হবে। *মাংস রান্নার আগে সম্ভব হলে মাংস ৫-১০ মিনিট মাংস সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যায়। উচ্চতাপে রান্না করতে হবে। *মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টকদই, পেঁপে বাটা  ও লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। *যাদের উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা আছে বা কো-মরবিডিটি আছে তারা একেবারেই না এড়াতে পারলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ১-২ টুকরো খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে মাংস রান্নায় সবজি ব্যবহার করতে হবে যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম। কিংবা তারা মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন। *গুরুপাক খাবারের সঙ্গে শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখা যেতে পারে । *তিনবেলা ভারি খাবার না খেয়ে যে কোনো একবেলা হালকা খাবার যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।  *ঈদে বাড়িতে নানারকম খাবার থাকে তাই বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন। *ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয় সে জন্য অবশ্যই সকাল বিকালে ব্যায়াম করে বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন। ঈদের সারা দিন সঠিক খাবার সম্পর্কে জানতে হলে মানতে হবে যেই খাবারই খান, পরিমাণ মতো খান। তিনবেলা লাল মাংস না খেয়ে, যে কোনো ১ বা ২ বেলা লাল মাংস গ্রহণ করতে পারেন সঙ্গে অন্যান্য যে কোনো পদ।

লেখক : পুষ্টিবিদ
ফরাজি হসপিটাল, বারিধারা, ঢাকা।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here