ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়া

0

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোর একটি হলো ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম-সাধনার পর আসে খুশির দিন অর্থাৎ ঈদ। বাঙালি জাতি এমনিতেই রসনা প্রেমি। পুরো রমজান মাসে তারা নানাবিদ মশলাদার, গুরুপাক খাবার খায় এবং পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের রুটিন থাকে। সব মিলিয়ে ঈদের দিনটিতে একটা বিশাল পরিবর্তন আসে।

আমরা সবাই ভালো খাবার খেতে পছন্দ করি ঠিকই কিন্তু যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আছেন তাদের কিন্তু ইচ্ছে মতো খেলে চলবে না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, ফ্যাটি লিভার, ডিসলিপিডেমিয়া (রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি) এবং হৃদরোগ আছে তাদের ঈদের দিনেও খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তা না হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেঁড়ে যেতে পারে।

এবারে ঈদ হবে প্রচণ্ড গরমে তাই খাবার নির্বাচনে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাপদাহে যেন পানিশূন্যতা না হয় তা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

আজকাল দেশীয় খাবারের পাশাপাশি ফিউশন এবং বিদেশি খাবার তৈরি ও পরিবেশনের প্রবণতা দেখা যায়।

সারা মাস ভারী খাবার যারা কম খেয়েছেন অথবা খাননি তারাও ঈদের দিন কিন্তু কিছুটা হলেও এসব ভারী খাবার খেয়েই ফেলেন।

ঈদের দিনে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবারগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের দিন ও তার পরের দুই দিন হাসপাতলগুলোতে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রাইটিস, হার্ট বার্ণ ইত্যাদি নিয়ে রোগী বেশি ভর্তি হয়ে থাকে।

যারা সুস্থ স্বাভাবিক আছেন তাদের খাবার তালিকা কেমন হবে এবারে জেনে নেই তা-

সকালঃ
সকালে নাস্তায় রুটির সাথে মুরগির মাংস ও একটা মিক্সড সবজি থাকতে পারে। অথবা সবজি খিচুড়ি সাথে ডিমের কারি ও সালাদ রাখা যায়। এছাড়াও দুধ সেমাই ও রকমারি ফল হতে পারে সুষম সকালের নাস্তা। যেহেতু গরমের প্রকোপ অনেক তাই ফলের রস বা রসালো ফল রাখা প্রয়োজন যাতে গরমের তেজ মোকাবেলা করা যায়।

দুপুরঃ
এই বেলায় কম তেল বা ঘিয়ে সাদা পোলাও থাকতে পারে সাথে মুরগি বা মাংসের গ্রিল বা বেকড একটা আইটেম রাখা যায় ট্রেডিশনাল রোস্ট বা রেজালার পরিবর্তে। সাথে অবশ্যই রাখতে হবে সালাদ। টক দইয়ের শরবত বা বোরহানি গরমে দিতে পারে তৃপ্তি।

রাতঃ
যেহেতু সারাদিন বেশ ভারী খাওয়া হবে তাই রাতে খাবারটা খুবই সাধারণ রাখা দরকার। যেমন- সাদা ভাত, পাতলা ডাল, মাছের ঝোল আর সবজি। কেউ চাইলে রুটিও খেতে পারেন। তাছাড়াও যারা বেশি ডায়েট সচেতন তারা সবজি ও মুরগির সুপ সাথে একটা ডিম সেদ্ধ আর সালাদ দিয়েও সেরে নিতে পারেন রাতের খাবার।

ডেজার্ট হিসেবে সারাদিন খুব মিষ্টি খাবার পরিবেশন না করে ফ্রুট সালাদ অথবা ফালুদা, ফ্রট ইয়োগার্ট, ডাবের পুডিং, তরমুজের পুডিং ইত্যাদি পরিবেশন করাই ভাল।

যেহেতু গরমটা জাঁকিয়ে পড়েছে তাই হাইড্রেটেড থাকাটা খুব জরুরি। সারাদিন কোমল পানীয় পান না করে ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের রস আর কিছু না হলে অন্তত লেবুর শরবত পান করা উচিত।

মানুষ এখন না খেতে পেয়ে মরে না, বরং অতিরিক্ত খাওয়ার কারণেই অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তাই সবার উচিত পরিমিত ও পরিকল্পিতভাবে খেয়ে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে একটি সুন্দর ও সুস্থ ঈদ উদযাপন করা।

যারা ডায়াবেটিস, কিডনি ও উচ্চরক্তচাপসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত আছেন তারা অবশ্যই আপনার ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া কোন খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।

সারাদিন হাই ক্যালরি খাবার খাওয়া হলে অবশ্যই সন্ধ্যা অথবা রাতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শারিরীক ব্যায়াম করে ঝড়িয়ে নিতে পারেন কিছু ক্যালরি।

সবার ঈদ সুন্দর ও সুস্থতায় পরিপূর্ণ হোক সেই লক্ষ্যে সুষম খাদ্য গ্রহণ করুণ।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস, চট্টগ্রাম।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here