আশুলিয়ায় ক্লুলেস হত্যাকান্ডের মূলহোতা সহ ২ জন গ্রেফতার

0

আখতার রাফি:-আশুলিয়ায় ক্লুলেস হত্যাকান্ডের মূলহোতা এনামুল সানাসহ জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় র‍্যাব-৪। এর আগে, গতকাল সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে আশুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামীসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৪।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- খুলনা জেলার আব্দুল গফুর সানার ছেলে এনামুল সানা (২৭) ও আব্দুল খালেক গাজীর ছেলে সোহাগ রানা (২৮)। গ্রেফতারকৃত এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়া ভাড়া বাসায় বসবাস করতো এবং পূর্বে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকুরি করতো। বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালায়। গ্রেফতারকৃত সোহাগ বিগত ০২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে পেশায় একজন বাসের হেলপার।

গত ০৯ ডিসেম্বর বিকেলে আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে পুলিশ ও র‌্যাবকে বিষয়টি অবহিত করে স্থানীয়রা। পরবর্তীতে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় OIVS (On-Sight Identification & Verification System) ব্যবহার করে নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত ওই নারীর মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করে।

নিহতের নাম রুবিনা খাতুন। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছ এর মেয়ে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে গত রোববার (১০ ডিসেম্বর) আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র‍্যাব জানায়, হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল আশুলিয়ার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের মূলহোতা এনামুল সানা ও তার সহযোগী সোহাগ রানাকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত রুবিনা খাতুন নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। বিগত ০৬ মাস পূর্বে গ্রেফতারকৃত এনামুল এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহতের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেফতারকৃত এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়া ভাড়া বাসায় বসবাস করতো এবং পূর্বে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকুরি করতো। বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালায়। এনামুল প্রায় নিহত রুবিনাকে অধিক বেতনে চাকুরী দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতো।

গত ০৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ী খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। এনামুল ভিকটিম রুবিনা খাতুনকে সুযোগ বুঝে তার আশুলিয়া ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। এসময় বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে গত ০৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখে। বাসায় অবস্থানকালীন সময় নিহত রুবিনা এনামুলকে বারবার বিয়ের কথা বললে এনামুল রুবিনাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। গত ০৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টার দিকে নিহত রুবিনা এনামুলকে পুনরায় বিয়ের কথা বলায় এনামুল রুবিনাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এসময় উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এসময় নিহতের হাতে লেখা এনামুল নামটি মেহেদী দিয়ে ঢেকে দেয়।

র‍্যাব আরও জানায়, নিহত রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কিভাবে ঘটনা ধামাচাপা দিবে সে বিষয়ে উপায়ন্ত না দেখে এনামুল তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রেফতারকৃত সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে তার বাসায় আসতে বলে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সোহাগ রাত ৮ টায় এনামুলের বাসায় আসে এবং ভিকটিম রুবিনার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে। এনামুল ও সোহাগ রাত ৩ টার দিকে সম্মিলিতভাবে নিহত রুবিনার মৃতদেহটি চাদর দিয়ে পেচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনে। পরবর্তীতে নিহতের মৃতদেহ এনামুল ও সোহাগ মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে ০৫ কিঃ মিঃ দুরত্বে রাঙামাটি ব্রীজের উপর থেকে বংশাই নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত এনামুল গত ০৬ বছর পূর্বে খুলনা থেকে ঢাকায় এসে আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারসহ বসবাস করে আসছিল। সে গামের্ন্টসের সুপারভাইজারের চাকুরী করতো। বর্তমানে সে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালাতো। ৭/৮ মাস পূর্বে নারী কেন্দ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী তাকে আশুলিয়ার আগের বাসা থেকে বিতাড়িত করে দেয়। এছাড়াও সে একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে লিপ্ত ছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানায় র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃত সোহাগ বিগত ০২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে পেশায় একজন বাসের হেলপার। সে গ্রেফতারকৃত এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তার যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকত। সে ইতিপূর্বে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় ০১ মাস কারাভোগ করেছে বলেও জানায় র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here