অফিসে কেমন হবে আপনার পোশাক

0

অফিসে খুব চড়া ধাঁচের কিছু পরা ঠিক নয়। এক কথায়- চাইলেই অফিসে যে কোনো ধরনের পোশাক পরে যেতে পারবেন না। কেননা, অফিসের পোশাক হওয়া চাই রুচিশীল ও মার্জিত।  নিত্যদিনের পোশাকের বাইরে কোনো পার্টি থাকলে বদলে যাবে পোশাক। এভাবে পোশাকের সংগ্রহটা গুছিয়ে ফেললে অফিসের পোশাক নিয়ে আর তেমন ভাবনা থাকবে না।

ছাত্রজীবনে ফরমাল পোশাক বলতে হয়তো বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানে পরার পোশাককেই বোঝাত। তবে অফিসের ব্যাপারটি একদম আলাদা। কাজে যোগ দেওয়ার আগে তাই পোশাকের ব্যাপারেও একটু প্রস্তুতি চাই। আজকাল অনেক অফিসে ফিউশনধর্মী পোশাকেরও কদর বেড়েছে বেশ। টপস, কুর্তি, জিন্স, ফতুয়াসহ অন্যান্য পোশাকের ভিড় বেড়েছে এই তালিকায়।

প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন কোন পোশাকটি পরবেন, কোন লুক মানাবে আর সাজটাই বা কেমন হবে। ঠিকঠাক লুক পেতে সাজ-পোশাকে একটু স্বাতন্ত্র্যের ছোঁয়া আসবে কীভাবে। কারণ আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের পরিচয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটাই এখানে মুখ্য। যারা আধুনিক করপোরেট জবে নিয়োজিত, তারা বিজনেস স্যুটেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। 

বসন্তের দিনে হালকা গাঢ় যে কোনো রঙের পোশাক মানানসই। বর্ষায় কিছুটা নীলের ছোঁয়া থাকে। এ ছাড়াও গাঢ় অন্যান্য রং প্রাধান্য পাবে। শরৎ-হেমন্তে পোশাক রীতিতে সবাই একটু উদার হন। গরমের দাপট না থাকায় পোশাকের ফেব্রিক নিয়ে খুব বেশি ভাবায় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে, করপোরেট লুক আনতে গিয়ে যেন আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ভাবটি হারিয়ে না যায়। সুতরাং কোন পোশাকে আপনাকে ভালো লাগবে এবং কোন পোশাকে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেটা বিবেচনায় এনে এ সপ্তাহের জন্য চার-পাঁচ সেট পছন্দের পোশাক সংগ্রহে রাখুন।

ফ্যাশন হাউস আরমাডিওর ফ্যাশন পরামর্শদাতা ফারহীন লালারুখ খুররম বলেন, ‘মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ ওড়নার সেটের ধারণাটি এখন আর তেমন চলছে না। লেগিংস বা প্যান্টের সঙ্গে নানা রকম টপ, শার্ট বা কুর্তাই এখন জনপ্রিয়। আর ছেলেদের শার্টেও বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায় এখন। সেমি ক্যাজুয়াল ব্লেজারগুলোও বেশ আকর্ষণীয়।’ 

খুব চড়া ধাঁচের কিছু পরা ঠিক নয় অফিসে। যেমন লেগিংস প্রিন্টের না হয়ে একরঙা হওয়াই ভালো। সেটা সব সময় কালো না হলেও চলবে। তবে কেউ প্রিন্টের লেগিংস পরলেও কুর্তা বা শার্ট পরুক তাহলে একরঙা। প্রিন্টের পালাজ্জোর সঙ্গে পরতে পারে একরঙা লম্বা শার্ট। স্ট্রেচ প্যান্টও অফিসে বেশ আরামদায়ক। কিছু পোশাক সংগ্রহে থাকলে ভালো বলে মনে করেন ফারহীন। সেগুলো হলো কালো ফিটেড প্যান্ট, সেটা লিনেন বা সুতির তৈরি হতে পারে। বুট কাট ধাঁচের বা চাপা- দুটি স্টাইলই চলতে পারে প্যান্টের ক্ষেত্রে। বুট কাট প্যান্ট হলে টপ হতে পারে খাটো। আর চাপা প্যান্টের সঙ্গে পরতে পারেন লম্বা কুর্তা বা শার্ট। 

ছেলেদের কয়েক রঙের কয়েকটা শার্ট থাকা চাই। ফরমাল জুতা, টাই- এসবও চাই। কম বয়সী ছেলেরা এখন স্লিম স্টাইলের টাই পরছেন। একটা ব্লেজার আর খাকি, কালো ও গাঢ় নীল রঙের প্যান্টও থাকুক। এভাবে পোশাকের সংগ্রহটা গুছিয়ে ফেললে রোজ কী পরা হবে, তা নিয়ে আর তেমন ভাবনা থাকবে না। আর অফিসের কোনো পার্টি থাকলে মেয়েরা নিশ্চিন্তে পরে ফেলতে পারেন সুতি জামদানি শাড়ি। দেশি সিল্ক, তাঁতের শাড়িও ভালো। তবে ব্লাউজটা হওয়া চাই সাদামাটা ধাঁচের আর খুব খোলামেলা নয় এমন। জাম্পস্যুট, লম্বা ফ্রক চুটিয়ে পরলেও অফিসে এগুলো একদমই পরা ঠিক নয় বলে মনে করেন ফারহীন। 

খাটো জ্যাকেট বা শ্রাগ অবশ্য সংগ্রহে থাকলে ভালো। যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই পরতে পারবেন। মেকআপের ক্ষেত্রে অফিস লুকে বাড়াবাড়ি মানায় না। ন্যাচারাল লুকটাই অফিসের জন্য পারফেক্ট। স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেস হিসেবে হালকা ময়েশ্চার বেসড ফাউন্ডেশন নিতে পারেন। তারপর লুজ ডাস্ট পাউডার দিয়ে দিন। এতে মেকআপ ভালোভাবে সেট হয়ে যাবে। মুখটাও অনেক ফ্রেশ দেখাবে। 

মেকআপ শেষ হওয়ার পর নো-মেকআপ লুকটিই  যেন আসে। তবে ত্বকের কালো বা ছোপ দাগ ঢেকে যাবে। চোখের নিচের কালো ভাব ও বলিরেখা লুকাবে। চোখের কাজলটি দিতে হবে পছন্দমতো। কালোর পাশাপাশি আজকাল অনেকেই ব্রাউন রঙের কাজল বেছে নিচ্ছেন।  চোখের পাতা বরাবর সরু করে আইলাইনার লাগাতে পারেন, তবে অফিসে যাওয়ার সময় আইশ্যাডো না লাগানোই ভালো। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগালে মন্দ লাগবে না। মৌসুমটি শুষ্ক হওয়ায় ব্রাইট গ্লসি হলে ভালো লাগবে।

এত সব পরামর্শ শুনে কি মনে হচ্ছে অফিসের জীবনটা একদম ফিকে হয়ে যাবে? তা নয়, ফ্যাশনেবল পোশাকের অভাব নেই এখন। অফিসের পোশাক ফরমাল তো হবেই কিন্তু একঘেয়ে কখনই নয়। কিছুদিন আগ পর্যন্তও পশ্চিমা ধাঁচের ফরমাল পোশাকের বৈচিত্র্য তেমন ছিল না। তবে এখন বদলেছে পরিস্থিতি। মেয়েদের দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের দোকানগুলোতেও পাওয়া যাবে মেয়েদের শার্ট, প্যান্ট, ব্লেজার ইত্যাদি। ওয়েস্টেকস, ক্যাটস আই, ইয়েলো, আরবান ট্রুথ, লা রিভ, সেইলর, নয়ের, অ্যাম্বার- এই ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাবেন। তবে এখানে ক্যাজুয়াল আর ফরমাল দুই ধরনের পোশাক থাকায় মানানসই পোশাকটি একটু খুঁজে জোগাড় করতে হবে।

লেখা : ফেরদৌস আরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here