অদেখা বাংলার তিন অজানা সৌন্দর্য খুঁজে বের করল রুচি

0

“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া- একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু!” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাই যেন সত্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দিকে তাকালে। এই যে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পূর্ণ আমাদের বাংলাদেশ। তবু এদেশকে আমরা কতটা জানি? কতটা দেখেছি বাংলার রূপ? দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে অজস্র সুন্দর অজানা সব জায়গা। এমন সব অজানা সৌন্দর্যের খোঁজে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়েছিল ‘রুচি অদেখা বাংলার খোঁজে সিজন টু’। প্রায় ৩০০০ প্রতিযোগীর পাঠানো অজানা-অদেখা সুন্দর জায়গা থেকে আমরা খুঁজে পেয়েছি এবারের তিন অদেখা বাংলার খোঁজ। বিশিষ্ট ভ্রমণপিপাসু এবং পাখি বিশারদ ইনাম আল হক এবং পর্বতারোহী, লেখক তারেক অণু-এর মতামত ও দর্শকদের ভোটে নির্বাচিত হয় এ বছরের সেরা তিন অদেখা বাংলার সৌন্দর্য।

১) দুবলহাটি রাজবাড়ি, নওগাঁ
খাইরুল ইসলামের লেখায় রুচি খোঁজ পায় সুদূর নওগাঁ জেলায় এক পরিত্যাক্ত রাজবাড়ির। দুবলহাটি রাজবাড়ি, নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। রোমান করিন্থিয়ান কলামের ভেতরে লাল ইটের গাঁথুনির এই বিশাল রাজবাড়িটি প্রায় দুইশ বছরের পুরনো।

২) ন’কাটা ঝর্ণা, রাঙামাটি
ন’কাটা ঝর্ণা, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ২ নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাঙ্গালকাটা এলাকায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে কাপ্তাই যাওয়ার পর, কাপ্তাই লঞ্চ ঘাট থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রলারের যাত্রা শেষে পৌঁছাতে হয় বিলাইছড়ি। এরপর ৩০-৪০ মিনিটের যাত্রায় ট্রলার নিয়ে যেতে হয় বাঙ্গালকাটা। 

বাঙ্গালকাটা থেকে এরপর গাইড নিয়ে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা পানি প্রবাহিত ছড়া, পাথরের উপর আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ ট্রেকিং করলে দেখা পাওয়া যায় ন’কাটা ঝর্ণার। পাহাড়ি ঝিরি পথে পাথরের উপর আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ হেঁটে এই ঝর্ণা দেখতে যাওয়াও অসম্ভব রোমাঞ্চকর। অনিন্দ্য সুন্দর এই ঝরনার খোঁজ পাই আমরা মো. ফয়সাল মেহেদি-এর লেখায়। মূলত মুপ্পোছড়া ঝরনার জল-ধারাতেই ন’কাটা ঝর্ণার সৃষ্টি। প্রায় ২শ ফুট উপর হতে ন’কাটা ছড়া ঝরনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই ঝর্ণা দুটির জলধারা মিশে গেছে কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশিতে। ঝরনার স্বচ্ছ পানি এবং অনেক উচুঁ থেকে আছড়ে পড়া জলরাশি যেন এক পার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি করে। ন’কাটা ঝরনাতে শুকনো মৌসুমে পানি খুব কম থাকে। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়তে থাকে। শীতকালে পানি প্রায় থাকে না বললেই চলে। বর্ষাই এখানে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

৩) ওয়াদর ঝরনা, বান্দরবান
বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে এক অজানা সৌন্দর্যের খোঁজ দেন মশিওর রহমান। আলীকদম থেকে ঝিরিতে নেমে ছায়া ঘেরা শান্ত ঝিরিতে হেঁটে হেঁটে অনেকটা দূর যাওয়ার পর একটা খাড়া পাহাড়ে উঠতে হয়। সেখান থেকে সোজা মুরং পাড়া।

পাড়ার উপর থেকে নিচে দেখা যায় পুরো আলিকদমকে। ভোরে মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকে পুরো শহর। পাড়া থেকে ঝর্ণায় যাওয়া খুবই সহজ। এই রাস্তাটি অসম্ভব সুন্দর। দুই পাশ দিয়ে সবুজ পাহাড় আর তার ঠিক মাঝখানেই সুন্দর এই রাস্তা। এই রাস্তা শেষ হলে বাকি পথ অনেকটাই অ্যাডভেঞ্চারাস। শুধুই নিচের দিকে নামতে হবে। উপর থেকে দুইঘণ্টা নিচে নামলেই চমৎকার সুন্দর একটা ঝিরি। সেই ঝিরি ধরে ঘণ্টা দুয়েক হাঁটলেই খুঁজে পাওয়া যাবে ঝর্ণা। সত্যিকার অর্থে এই ঝিরিটি ঝর্ণার চাইতেও অনেক বেশি সুন্দর। দীর্ঘ পথ হাঁটার পর দেখা মিলবে প্রথম ঝর্ণাটির যার নাম ওয়াদর অর্থাৎ পাখির বাসা। ঝর্ণাটিও দেখতে ঠিক পাখির নীড়ের মতোই। লুকানো গুহার মত আবদ্ধ জায়গায় পাথর ফুঁড়ে যেন বেরিয়েছে জলের ধারা। কেবল উপরে তাকালেই খোলা আকাশ। সেখান থেকে খুব কাছেই দ্বিতীয় ঝর্ণাটি। এটির সামনে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা। চারপাশ সবুজে ঘেরা। তার উপরে রোদ আর রোদের। বর্ষাকাল ঝর্ণা উপভোগ করার সেরা সময় হলেও এই দুই ঝর্ণায় প্রায় সারাবছরই পানি থাকে।

অদেখা এই তিনটি স্থানকে আরও সুন্দরভাবে আবিষ্কার এবং ট্রাভেলারদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা তিনটি ভ্রমণ ভিডিও তৈরি করি। বিজয়ী তিন জায়গা ছাড়াও নির্বাচিত সেরা স্থানগুলো আমরা ছড়িয়ে দিই বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে। ruchiexplorelimitless.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা সকল ভ্রমণপাগল মানুষের কাছে তুলে ধরি বাংলার এই অজানা-অদেখা সৌন্দর্যের গল্পগাথা। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here