সারা ফেলেছে পঞ্চগড়ের লাল সোনা

0

লাল সোনা হিসেবে সারা দেশে খ্যাতি পেয়েছে পঞ্চগড়ের শুকনো মরিচ। বর্তমানে চাষিরা ক্ষেত থেকে পাকা মরিচ তুলছেন। জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই বাড়ির আনাচে-কানাচে, বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে মরিচ চাষ করেছেন চাষিরা। পাকা মরিচের লাল রংয়ে রঙিন হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়।

তবে চাষিরা বলছেন বাজার এবার মন্দা। আগের মতো দাম নেই মরিচের। মরিচের আবাদ কেন্দ্রীক কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান হলেও শ্রমিকরা বলছেন ন্যায্য মজুরিও নেই তাদের। এতো সব অভিযোগের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশে পঞ্চগড়ের মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে এখন মরিচ আর মরিচ। মরিচের ক্ষেতে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে টকটকে লাল মরিচ। সেগুলো হাত দিয়ে তুলে এনে বাড়ির  উঠানে, টিনের ঘরের চালে বা বিস্তীর্ণ মাঠে রোদে শুকিয়ে ঘরে তুলছেন মরিচ চাষিরা। আর শুকনো এসব মরিচকে স্থানীয়রা বলছেন লাল সোনা।

দীর্ঘকাল ধরে এই জেলায় মরিচের আবাদ হলেও গত এক যুগে মরিচ চাষ করে গুণে, মানে আর দামে বাজিমাত করেছেন চাষিরা। অনেকের ভাগ্যও গেছে বদলে। পঞ্চগড়ের মরিচের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। আর লাল মরিচের নাম হয়ে গেছে লাল সোনা।

তবে চাষিরা গত বছরেও লাল সোনার ভালো দাম পেলেও এবছর বাজার যাচ্ছে মন্দা। তারা বলছেন, পরিশ্রম, চাষের খরচ, সার কীটনাশকের দাম, শ্রমিকের ব্যয় মিটিয়ে মরিচ আবাদ করে এবার লোকশান গুণতে হচ্ছে তাদের। পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে এবছর ফলনও কম হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, ভেজাল সার কীটনাশক প্রয়োগ করে কোনো লাভ হয়নি তাদের। এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও কোনো সহযোগিতা নেই অভিযোগ চাষিদের।

বোদা উপজেলার হাবসীপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি মোশারফ হোসেন জানান, এবার ফলনও ভালো হয়নি। কারণ পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি। বাজারে যে কীটনাশক পাওয়া যায়, তা দিয়ে পোকা দমন হয় না। কৃষি অফিসের সহযোগিতাও পাওয়া যায় না। বাজারে মরিচের দামও কম। লোকশানের আশঙ্কাই বেশি। তবে গতবার ফলনও ভালো হয়েছিল, দামও ভালো ছিল। মরিচ শুকাতে অনেক পরিশ্রম আর কষ্ট হয়। এজন্য প্রযুক্তি প্রয়োজন। সরকার চাষিদের মরিচ শুকানোর প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ দিলে ভালো হয়।

চাষিদের লাল সোনার দাম কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকদের উপরেও। তারা বলছেন ন্যায্য শ্রমমূল্য পাচ্ছেন না তারা। মরিচ তোলার কাজে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে পড়েছেন নারী শ্রমিকরা। তারা বলছেন, ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি দরে তারা ক্ষেত থেকে মরিচ তোলেন। সারাদিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পান তারা।

অভিযোগ থাকলেও পঞ্চগড়ের লাল সোনা খ্যাত শুকনো মরিচের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। গুণগত মান আর টকটকে লাল রংয়ের কারণে সারা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে শুকনো মরিচ কিনছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর দাম কম হলেও শুকনো মরিচের চাহিদা অনেক।

বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজার মরিচের বড় হাট। এই হাটে মরিচ কিনতে আসা সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, পঞ্চগড়ের মরিচের অনেক সুনাম রয়েছে। এই মরিচের দামও বেশি। সারা দেশে চাহিদা রয়েছে। তবে মরিচ শুকানোর ক্ষেত্রে এখনো প্রযুক্তি আসেনি এই এলাকায়। এখনো রোদে শুকানোর কারণে অনেক মরিচ নষ্ট হয়ে যায়। প্রযুক্তির মাধ্যমে শুকাতে পারলে মরিচের রং ও মান আরও ভালো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, দেশের সর্ব উত্তরের সমতল অঞ্চল পঞ্চগড়ে উৎপাদিত মরিচ কৃষি অর্থনীতিতে বড় জায়গা করে নিয়েছে। মরিচ চাষে লাভ ভালো পাওয়ায় অর্থকরী ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে কৃষকরা। ফলে দিন দিন জেলার ৫ উপজেলায় মরিচের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মরিচ চাষ করেও প্রতি বছর আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে জেলার চাষিরা। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে মরিচ। এবছর ৮ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষিরা আবাদ করেছেন ৯ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here