মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবগুলোর একটি হলো ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে খুশির দিন অর্থাৎ ঈদ। বাঙালি জাতি এমনিতেই রসনাপ্রেমী। পুরো রমজান মাসে তারা নানাবিধ মশলাদার, গুরুপাক খাবার খায় এবং পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের রুটিন থাকে। সব মিলিয়ে ঈদের দিনটিতে একটা বিশাল পরিবর্তন আসে।
ঈদের দিন যেহেতু আমাদের বাসায় পরিবার ও পরিজনদের উপস্থিতি থাকে তাই তৈরি হয় নানান রকমের মুখরোচক খাবার। এবারে ঈদ হবে প্রচণ্ড গরমে তাই খাবার নির্বাচনে বিশেষ নজর দিতে হবে। দাবদাহে যেন পানিশূন্যতা না হয় তা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ঈদের দিনে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের দিন ও তার পরের দুই দিন হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রাইটিস, হার্ট বার্ন ইত্যাদি নিয়ে রোগী বেশি ভর্তি হয়ে থাকে।
এবার জেনে নিই তবে কেমন হলে ভালো হয় ঈদের দিনের খাদ্য তালিকা-
সকাল : সকালের নাশতায় চালের রুটি সঙ্গে মুরগির মাংস ও একটা মিক্সড সবজি থাকতে পারে। অথবা সবজি খিচুড়ি সঙ্গে ডিমের কারি ও সালাদ রাখা যায়। এছাড়াও দুধ সেমাই ও রকমারি ফল হলে পারে সুষম সকালের নাশতা। যেহেতু গরমের প্রকোপ অনেক তাই ফলের রস বা রসালো ফল রাখা প্রয়োজন যাতে গরমের তেজ মোকাবিলা করা যায়।
দুপুর : এই বেলায় কম তেল বা ঘিয়ে সাদা পোলাও থাকতে পারে সঙ্গে মুরগি বা মাংসের গ্রিল বা বেকর্ড একটা আইটেম রাখা যায় ট্রাডিশনাল রোস্ট বা রেজালার পরিবর্তে। সঙ্গে অবশ্যই রাখতে হবে সালাদ। টক দইয়ের শরবত বা বোরহানি গরমে দিতে পারে তৃপ্তি।
রাত : যেহেতু সারা দিন বেশ ভারী খাওয়া হবে তাই রাতে খাবারটা খুবই সাধারণ রাখা দরকার। যেমন- সাদা ভাত, পাতলা ডাল, মাছের ঝোল আর সবজি। কেউ চাইলে রুটিও খেতে পারেন। তাছাড়াও যারা বেশি ডায়েট সচেতন তারা সবজি ও মুরগির স্যুপ সঙ্গে একটা ডিম সিদ্ধ আর সালাদ দিয়েও সেরে নিতে পারেন রাতের খাবার।
ডেজার্ট হিসেবে সারা দিন খুব মিষ্টি খাবার পরিবেশ না করে ফ্রুট সালাদ অথবা ফালুদা, ফ্রুট ইয়োগার্ট, ডাবের পুডিং, তরমুজের পুডিং ইত্যাদি পরিবেশ করাই ভালো।
যেহেতু গরমটা জাঁকিয়ে পড়েছে তাই হাইড্রেটেড থাকাটা খুব জরুরি। সারা দিন কোমল পানীয় পান না করে ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের রস আর কিছু না হলে অন্তত লেবুর শরবত পান করা উচিত।
মানুষ এখন না খেতে পেয়ে মরে না, বরং অতিরিক্ত খাওয়ার কারণেই অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তাই সবার উচিত পরিমিত ও পরিকল্পিতভাবে খেয়ে আত্মীয়স্বজনবে নিয়ে একটি সুন্দর ও সুস্থ ঈদ উদযাপন করা।
যারা ডায়াবেটিস, কিডনি ও উচ্চরক্তচাপসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই আপনার ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।
সারা দিন হাই ক্যালরি খাবার খাওয়া হলে অবশ্যই সন্ধ্যা অথবা রাতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করে ঝরিয়ে নিতে পারেন কিছু ক্যালরি।
সবার ঈদ সুন্দর ও সুস্থতায় পরিপূর্ণ হোক সেই লক্ষ্যে সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটালস, চট্টগ্রাম