দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের বিচার শুরু

0

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রথম ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। সোমবার (১৪ এপ্রিল) তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।

এএফপি বলছে, সামরিক আইন (মার্শাল ল’) জারির স্বল্পস্থায়ী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। এ অভিযোগে তিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে হাজির হন।

ইউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ডিসেম্বরে তার স্বল্পস্থায়ী সামরিক আইন জারি গণতান্ত্রিক দেশটিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। ইউন ৩ ডিসেম্বর রাজনৈতিক কার্যকলাপ স্থগিত ও মিডিয়ার ওপর সেন্সরশিপের নির্দেশ দিয়ে দেশে সামরিক শাসন আরোপের চেষ্টা চালান। বিরোধী এমপিরা এর বিপক্ষে ভোট দিয়ে মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় ডিক্রিটি বাতিল করে দেয়।

এই বিপর্যয়কর প্রচেষ্টার ফলে জাতীয় পরিষদ ইউনকে অভিশংসন করে, যার পরপরই সাংবিধানিক আদালত ৪ এপ্রিল তাকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে বরখাস্ত করে। প্রেসিডেন্টের সব সুযোগ-সুবিধা হারানো সত্ত্বেও ইউন বিদ্রোহের অভিযোগে একটি ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি হলেন। আজ সোমবার থেকে তার এ বিচার শুরু হলো।

এএফপির খবরে জানানো হয়, চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় সংসদে অভিশংসিত হওয়ার পর ইউন সুক ইওলকে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ৩ ডিসেম্বর তিনি বেসামরিক শাসন খর্ব করে সংসদ ভবনে সশস্ত্র সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করেন।

এ ঘটনার জেরে জানুয়ারিতে ইউনকে গ্রেফতার করা হয়, যা তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেফতার হওয়ার নজির স্থাপন করে। যদিও পরে তিনি প্রক্রিয়াগত কারণে জামিনে মুক্তি পান।

সোমবার সকালে ইউন সিউলের সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির হন। সেখানে বিচারকরা তার নাম, জন্মতারিখ ও ঠিকানা জানতে চান। তাকে ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে সম্বোধন করে বিচারক প্রশ্ন করেন, “আপনার বর্তমান ঠিকানা কী?”

রাষ্ট্রপক্ষ মামলার প্রেক্ষিতে দু’জন সামরিক কর্মকর্তাকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে ডেকেছে। তাদের একজন দাবি করেছেন, উচ্চ পর্যায়ের সামরিক নেতারা তাকে সংসদ সদস্যদের জোরপূর্বক বের করে দিয়ে মার্শাল ল’ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে আইনপ্রণেতারা সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদে প্রবেশ করেন এবং মার্শাল ল’ বাতিল করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য করেন ইউনকে।

আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলাটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। ইউনের আইনজীবী মিন কিয়ং-সিক জানান, মামলার নথি ৭০ হাজার পৃষ্ঠার বেশি এবং সাক্ষীর সংখ্যাও অনেক। ফলে আদালত চাইলে মামলার রায় আগস্টের আগে দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অভিশংসিত হওয়া প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে-র বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় আসতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। ইউন দোষী সাব্যস্ত হলে, তিনি ১৯৭৯ সালের এক অভ্যুত্থানে জড়িত দু’জন সামরিক নেতার পর তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হবেন যিনি বিদ্রোহের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হবেন। এই অভিযোগে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯৯৭ সালের পর থেকে কার্যত কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

আইনজীবী মিন আরও বলেন, “এই মামলায় পূর্ববর্তী অভ্যুত্থানের নজির প্রযোজ্য হতে পারে, কারণ এটি সেনাবাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা সম্পর্কিত।” 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here