দিনের শুরুতে প্রতিপক্ষের লেজটুকু ছেটে দিয়ে ব্যাটিংয়ে ঢিমেতালে এগিয়ে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে শেষ সেশন শুরু হতেই পাল্টে গেল চিত্র, আসা যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলেন ব্যাটসম্যানরা। টপাটপ পড়ল ১১ উইকেট, যার বলি কেবল ক্যারিবিয়ানরা নন, স্বাগতিকরাও। তাইতো, আনরিখ নরকিয়ার দুর্দান্ত বোলিংয়ে বড় লিড পেয়েও দিন শেষে স্বস্তিতে নেই দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেঞ্চুরিয়নে বুধবার (০১ মার্চ) টেস্টের দ্বিতীয় দিনে উইকেট পড়েছে মোট ১৬টি। ৮ উইকেট ৩১৪ রান নিয়ে খেলতে নেমে আরও ২৮ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের দিন ৩ উইকেট নেওয়া আলজারি জোসেফ প্রতিপক্ষের শেষ দুই ব্যাটসম্যান জেরল্ড কুটসিয়া ও নরকিয়াকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন।
১৩০ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটামুটি ভালো করলেও এরপর দ্রুত উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান করে তারা। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১৭৯ রানে এগিয়ে আছে দলটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে প্রথম আঘাত করেন কাগিসো রাবাদা, বোল্ড হয়ে ফেরেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। এরপর তেজনারাইন চন্দপলকে নিয়ে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করেন রিমন রিফার। তবে টিকতে পারেননি চন্দরপল, ব্যক্তিগত ২২ রানে কুটসিয়ার বলে ক্যাচ আউট হন তিনি।
তৃতীয় উইকেটে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা গড়েন রিফার ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড। যদিও সেটা খুব বড় কিছু নয়। ব্ল্যাকউডকে কটবিহাইন্ড করে প্রথম শিকার ধরেন নরকিয়া, ভাঙে ৬৪ রানের জুটি।
তারপর রোস্টন চেইসকে নিয়ে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছিলেন রিফার। ছয় টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন রিফার। একসময় দলটির স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৬৯।
ওই রানেই পেসার ইয়ানসেনের ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। শেষ হয় তার ৭টি চারে ৬২ রানের ইনিংস। এরপরই মূলত দিক হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ওভারের প্রথম বলে চেইসকে ফেরান রাবাদা।
এরপর একে একে জসুয়া দা সিলভা, জেসন হোল্ডার, আলজারি জোসেফ ও কাইল মেয়ার্সকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নরকিয়া। ক্যারিয়ারে এই নিয়ে চতুর্থবার পাঁচ উইকেট পেলেন ডানহাতি এই পেসার। আর শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে ফিরিয়ে উইন্ডিজ ইনিংসের ইতি টেনে দেন কুটসিয়া।
বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে অনেক বড় লিডের পাওয়ার আনন্দ যদিও শেষবেলায় নিভে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। শুরুটা অবশ্য তারা ভালোই করেছিল।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এইডেন মারক্রাম যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করেন তিনি। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে তুলতে থাকেন রান। তবে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে দলীয় ৩১ রানে জোসেফের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডিন এলগার।
পরের দুই ওভারে আরও দুটি উইকেট হারায় তারা। অভিষিক্ত টনি ডি জরজিকে শূন্যতে ফেরান রোচ আর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা কটবিহাইন্ড হন জোসেফের বলে। দুজনই মারেন গোল্ডেন ডাক।
আর একেবারে শেষ বেলায় জেসন হোল্ডার বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলে এলবিডব্লিউ করে দেন কেগান পিটারসেনকে। ওখানেই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন আম্পায়ার। হয়তো হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিক দল। শেষ সেশনে যেভাবে মুড়িমুড়কির মতো উইকেট পড়ল, তাতে তৃতীয় দিনে দিচ্ছে দারুণ নাটকীয়তার হাতছানি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩১৪/৮) ৮৬.৩ ওভারে ৩৪২ (ইয়ানসেন ২৩*, কুটসিয়া ১৭, নরকিয়া ১৪; রোচ ১৭-১-৭১-১, জোসেফ ১৮.৩-০-৮১-৫, মেয়ার্স ১০-২-২৩-১, গ্যাব্রিয়েল ১২-১-৪৯-১, হোল্ডার ১৪-১-৬৪-১, চেইস ১৪-০-৩৩-০, ব্ল্যাকউড ১-০-৪-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৬৯ ওভারে ২১২ (ব্র্যাথওয়েট ১১, চন্দরপল ২২, রিফার ৬২, ব্ল্যাকউড ৩৭, চেইস ২২, মেয়ার্স ১৮, দা সিলভা ৪, হোল্ডার ০, জোসেফ ৪, রোচ ৪*, গ্যাব্রিয়েল ০; রাবাদা ১৬-৪-৪৪-২, ইয়ানসেন ১৭-৩-৬৪-১, নরকিয়া ১৬-৫-৩৬-৫, কুটসিয়া ১২-০-৪৫-২, মুথুসামি ৮-২-১০-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৮.১ ওভারে ৪৯/৪ (মারক্রাম ৩৫*, এলগার ১, ডি জরজি ০, বাভুমা ০, পিটারসেন ৭; রোচ ৪-০-২৮-১, জোসেফ ৪-০-১৭-২, হোল্ডার ০.১-০-০-১)