দুই শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, বগুড়ায় পাঁচ পুলিশ সদস্য গ্রেফতার

0

দুই শিক্ষার্থী ও ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় বগুড়ায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার ভোরে বগুড়ার শেরপুর, ধুনট ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার দিগলকান্দি গ্রামের দুই শিক্ষার্থী ও ফ্রিল্যান্সার কাজে যুক্ত মোঃ রাব্বি (১৯) ও মো: জাহাঙ্গীরকে (২৪) অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের নীলনকশা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি তাদের বাড়িতে যায়। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দুই ফ্রিল্যান্সারকে। এরপর জেলার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকায় নিয়ে গিয়ে পরিবারের কাছে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ঢাকার পথে যাওয়ার সময় হত্যা করে গুম করার হুমকি দেওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা ভয়ে ভয়ে কথা বলে অনুরোধ করে ওই রাতেই জাহাঙ্গীরের পরিবার ২ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে রাব্বির পরিবার বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাঠালে তিনিও ছাড়া পান। মুক্তির পর মুক্তিপণ আদায়কারীরা ডিবি পুলিশ কিনা এ নিয়ে সন্দেহ হলে রাব্বি ও জাহাঙ্গীরের পরিবার ও স্বজনরা বগুড়া জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে মুক্তিপণ আদায়কারীদের গাড়ির পিছু নেয়। মুক্তিপণ আদায়কারীরা শেরপুর উপজেলা ছেড়ে জেলার রাজশাহী যাওয়ারপথে নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের টহল দলের কাছে মুক্তিপণের ঘটনাটি খুলে বলে। কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের বিষয়টি সন্দেহ হলে তাদের পিছু নেয়। মুক্তিপণ আদায়কারীদের বহনকৃত হাইস গাড়িটি ইউটার্ন নিয়ে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশ তাদের আটক করে। আটকের পরই জানতে পারেন ৫ জন আসল পুলিশ ও একজন সিভিল চালক। 

আটককৃতরা হলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবিতে কর্মরত এসআই শাহীন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, মো. মাহবুর আলম, মো. বাশির আলী এবং সিভিল ড্রাইভার মো. মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় বগুড়ার ধুনট থানায় রাব্বির বাবা সেলিম শেখ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। 

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশ রাতেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন যে রাজশাহী ডিবিতে কর্মরত কনস্টেবল ওহাবের বাড়ি বগুড়ার ধুনটের দিঘলকান্দি গ্রামে। সেই ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে যে তার বাড়ির পাশে রাব্বি ও জাহাঙ্গীর ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত। তারপর এই অনৈতিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে জড়িয়ে পড়েন ওই পুলিশ সদস্যরা। 

কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনোয়ারুজ্জামান জানান, একদল ব্যক্তি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করেছেন। এমন সংবাদ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে অভিযানে যাদের আটক করা হয়েছে তারা রাজশাহী ডিবি পুলিশের ৫ জন সদস্য এবং একজন সিভিল ড্রাইভার রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়।

বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম জানান, গ্রেফতারকৃত ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নগদ, ১টি ওয়াকিটকি, ১টি হ্যান্ডকাফ ও ৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। 

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বগুড়ার ঘটনাটি নিয়ে সে জেলায় মামলা হয়েছে। এঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত বা আইনগত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here