সাইবার অপরাধীরা যেভাবে গুগলের অনুসন্ধানকে প্রভাবিত করে

0

সাইবার অপরাধীরা সার্চ ইঞ্জিনের অপটিমাইজেশন ব্যবহার করে নিজেদের ওয়েবসাইটগুলোকে র‌্যাঙ্ক করে। ফলে ব্যবহারকারী সহজে প্রতারণামূলক বিনিয়োগ, জাল ই-কমার্স সাইট কিংবা ফিশিং আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হন

সাইবার ক্রাইম – সাইবার অপরাধীরা নানা উপায়ে গুগলের অনুসন্ধান প্রভাবিত করে। গুগলের অ্যালগরিদমকে ফাঁকি দেওয়া, র‌্যাঙ্কিং প্রভাবিত করা এবং এর ফলাফলকে বিভ্রান্ত করে থাকে। এমনকি সাধারণ ব্যবহারকারীও খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন..

ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে- ‘সার্চ ইঞ্জিন’ ওয়েবসাইটগুলোতে ট্রাফিক নির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকের দিনে ডিজিটাল ক্ষেত্রে গুগল, বিং এবং ইয়াহুর মতো অসংখ্য ‘সার্চ ইঞ্জিন’ রয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে- আমাদের প্রাত্যহিক কার্য সম্পাদন করতে পারি। তন্মধ্যে ‘গুগল’ সবচেয়ে শক্তিশালী ‘সার্চ ইঞ্জিন’। তাই সাইবার অপরাধীরা স্ক্যামাররা তাদের অসাধু চর্চার (সুবিধা) জন্য গুগলের সার্চিংয়ের (অনুসন্ধান) ফলাফলকে ম্যানিপুলেট (প্রভাবিত) করছে।

অপরাধীরা এজন্য এআই-এর সাহায্য নিচ্ছে। কারণ সাইবার অপরাধীরা এআই-এর মাধ্যমে গুগলের অ্যালগরিদমকে ফাঁকি দেয়, র‌্যাঙ্ক ম্যানিপুলেট করে থাকে এবং সার্চিংয়ের ফলাফলের বিষয়বস্তুকে বিভ্রান্ত করে থাকে।

আজকের লেখা (ফিচার) থেকে আমরা জানব- কীভাবে সাইবার অপরাধীরা গুগল  সার্চের (অনুসন্ধান) ফলাফলকে প্রভাবিত (ম্যানিপুলেট) করতে এআই ব্যবহার করে, কী কৌশল ব্যবহার করে এবং এই প্রতারণা থেকে আমরা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি।

‘সার্চ ইঞ্জিন’ ম্যানিপুলেশন বোঝা  অসাধু লোকেরা (স্ক্যামাররা) এর অপটিমাইজেশন ব্যবহার করে  তাদের ওয়েবসাইটগুলোকে সার্চ ইঞ্জিনগুলোয় র‌্যাঙ্ক করে থাকে। সাইবার অপরাধীরা (স্ক্যামাররা) গুগলের র‌্যাঙ্কিং সিস্টেমকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য অবৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করে। যা মূলত তারা এআই অটোমেশন, বিষয়বস্তু তৈরি, ক্লোকিং কৌশল এবং ব্ল্যাক হ্যাট এসইও ব্যবহার করে নিজেদের সার্চিংয়ের র‌্যাঙ্কিং বাড়াতে।

সাইবার অপরাধীরা গুগল সার্চের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে তারা মূলত যে কৌশল ব্যবহার করে…

এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট ফার্ম

সাইবার অপরাধীরা গুগল অনুসন্ধানের ফলাফল ম্যানিপুলেট করতে অনেক উপায়ে এআই ব্যবহার করে, তবে তারা সাধারণত সবচেয়ে বেশি এআই-জেনারেটেড কনটেন্ট ফার্ম ব্যবহার করে। উন্নত ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (NLP) মডেল ব্যবহার করে, সাইবার অপরাধীরা সার্চিংয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ের জন্য অপটিমাইজ করা প্রচুর বিষয়বস্তু তৈরি করতে পারে। এআই উৎপাদিত ফলাফলগুলো দেখতে হুবহু সত্যিকারের মনে হয়, তবে এতে ফলস ইনফরমেশন, প্রতারণারমূলক পর্যালোচনা বা ফিশিং লিঙ্ক অবশ্যই থাকবে।

এআই-এর  স্বয়ংক্রিয় লিঙ্ক

বিল্ডিং ব্যাকলিঙ্কগুলো গুগলের র‌্যাঙ্কিং অ্যালগরিদমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সাইবার অপরাধীরা এআইচালিত বট ব্যবহার করে একাধিক সাইটে হাজার হাজার ব্যাকলিঙ্ক তৈরি করে। যা প্রায়শই ফোরাম পোস্ট, কমেন্ট বক্স কিংবা ব্লগ মন্তব্য এবং গেস্ট আর্টিকেলে রাখা হয়। যা অবৈধ ওয়েবসাইটগুলোকে র‌্যাঙ্ক করতে সাহায্য করে থাকে।

কীওয়ার্ড স্টাফিং এবং ক্লোকিং

যে কেউ কীওয়ার্ড স্টাফিং শনাক্ত করতে পারে। কিছু এআই সরঞ্জাম রয়েছে, যা সার্চিং বিশ্লেষণ এবং নিবন্ধগুলোর কীওয়ার্ডগুলোকে স্বাভাবিকভাবে আলাদা করতে পারে। উপরন্তু ক্লোকিং কৌশলগুলো ‘সার্চ ইঞ্জিন’ ও মানুষের কাছে বিভিন্ন বিষয়বস্তু প্রদর্শন করে এবং গুগল স্ক্রলারদের প্রতারিত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করে।

মিথ্যে পর্যালোচনা এবং সোশ্যাল ফলস প্রুভ ম্যানিপুলেশন

অনলাইন পর্যালোচনা গ্রাহকের সিদ্ধান্ত এবং সার্চিংয়ের র‌্যাঙ্কিংকে প্রভাবিত করে। সাইবার অপরাধীরা স্ক্যাম ওয়েবসাইটগুলোর জন্য পজিটিভ অ্যানালাইসিস তৈরি করতে এবং তাদের প্রতিযোগীর ওয়েবসাইটগুলোতে নেগেটিভ অ্যানালাইসিস পোস্ট করতে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে। এই কৌশলটি কোনো সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে গুগলের ধারণাকে প্রভাবিত (ম্যানিপুলেট) করে।

মিথ্যে সংবাদ, ভুল তথ্য প্রদান

সাইবার অপরাধীরা গুগল সার্চের ফলাফল ম্যানিপুলেট করতে মিথ্যে খবরও ব্যবহার করে। এআই-এর মাধ্যমে তারা বাস্তবসম্মত খবর তৈরি করে কিন্তু বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে দেয়। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারের মাধ্যমে ভাইরাল হয়, এটি তাদের অনুসন্ধানের র‌্যাঙ্কিং বাড়াতে সহায়তা করে।

মেশিন লার্নিং-এর মাধ্যমে অ্যালগরিদম গেমিং সাইবার অপরাধীরা গুগলের অ্যালগরিদম আপডেটগুলো বিশ্লেষণ করতে, ফাঁকফোঁকর খুঁজে বের করতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে। তারপরে তারা র‌্যাঙ্কিং মানদণ্ডে দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য তাদের কৌশলগুলোকে সূক্ষ্মভাবে ব্যবহার করে নিশ্চিত করে যে তাদের বিষয়বস্তু সার্চিংয়ের ফলাফলে শীর্ষে থাকবে।

জালিয়াতি এবং সাইবার ট্রাফিক

সাইবার অপরাধীরা স্ক্যামাররা গুগল অনুসন্ধানের ফলাফল ম্যানিপুলেট করতে যে আরেকটি কৌশল ব্যবহার করে তা হলো এআই-উৎপাদিত বট ট্রাফিক। প্রতারকরা ব্যবহারকারীর ব্যস্ততাকে পুঁজি করে লিঙ্কগুলোতে ক্লিক এবং ওয়েবসাইটগুলোর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে। যেন তারা গুগলের র‌্যাঙ্কিং সিস্টেমে একে প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখায়।

তথ্যসূত্র : টেকপ্লুটো

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here