যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের আর জায়গা নেই- গত জানুয়ারিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সেই নির্বাহী আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন দেশটির আদালত।
মঙ্গলবার ফেডারেল বিচারক অ্যানা রেয়েস ট্রাম্পের সেই নির্বাহী আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন।
ওয়াশিংটনের এক নিম্ন আদালতের বিচারক অ্যানা একটি রায়ে জানিয়েছেন, সামরিক চাকরি থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বহিষ্কার করার আদেশটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রশাসনকে এ বিষয়ে আবেদনের সময় দিয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বারা মনোনীত এই বিচারক। অ্যানার কথায়, “আমি জানি আদালতের এই রায়ে বিতর্ক তৈরি হবে। তবে একটি সুস্থ গণতন্ত্রে দ্বিমত ইতিবাচক। তবে এ বিষয়ে আমাদের সকলেরই একমত হওয়া উচিত যে, যারা দেশের সেবা করার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন, তারা সকলেই আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধার যোগ্য।”
আদালতের এই রায়ে খুশি মামলাকারী ১৪ জন ট্রান্সজেন্ডার সেনাকর্মী। সেনার সেকেন্ড লেফ্টেন্যান্ট ট্রান্সজেন্ডার নিকোলাস ট্যালবটের কথায়, “আগামী সপ্তাহে সেনাবাহিনী থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হবে কি না, তা জানার জন্য এতদিন প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছিলাম। এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলাম। এটাই আমি এত দিন ধরে চেয়েছিলাম। সেনাবাহিনীতে কাজ করা আমার স্বপ্ন ছিল, অনেক কষ্টে এই চাকরি পেয়েছি। সেটাও হারাতে বসেছিলাম।”
যদিও আদালতের রায়ের পর এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার বলেছেন, “বিচারকেরা এখন নিজেদের সেনাবাহিনীর সর্বেসর্বা মনে করছেন! এই উন্মাদনার কি শেষ নেই?”
প্রসঙ্গত, এর আগে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সরকারি নথিতে পৃথক লিঙ্গের ব্যবস্থা নিয়ে নীতি চালু করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই সমস্ত নীতি বদলে ফেলতে উদ্যোগী হন। এমনকি, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার প্রায় ৫০ শতাংশ জুড়ে ছিল সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের বিরুদ্ধে প্রচার। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। গত ২৭ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। সেই আদেশে বলা হয়, একজন ব্যক্তির ‘লিঙ্গপরিচয়’ নিয়ে ‘দ্বন্দ্ব’ থাকলে তা কখনওই সামরিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর মান পূরণ করতে পারে না! আমেরিকার পেন্টাগন-কে এক মাসের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে নীতি নির্ধারণের নির্দেশ দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরপরই সে দেশের সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগ বন্ধের কথা জানায়। জানানো হয়, কর্মরতদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পরিবর্তন ও সেই সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধাও দেবে না মার্কিন সেনাবাহিনী। এ নিয়ে বিস্তর বিতর্কের পর এবার সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিলে মার্কিন আদালত। সূত্র: রয়টার্স, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, এপি