ফুলকপি। মৌসুম শেষ। এবার মৌসুমের শেষ দিকে কৃষক তেমন দাম ভালো পাননি। দাম না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে ফুলকপি আর চাষ করবেন না বলে পণ করেছেন। তবে বুদ্ধিমান চাষিরা আবার চাষ করেছেন। সাদা ফুলকপির সাথে তারা চাষ করেছেন রঙিন ফুলকপিও। অসময়ে চাষ করে তারা ভালো দাম পেয়েছেন। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে চার রঙর ফুলকপি। তার মধ্যে রয়েছে সাদা, সবুজ, বেগুনি ও হলুদ।
শুধু রঙে রঙিন নয় সাদা থেকে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এছাড়া দামও সাদা থেকে দ্বিগুণ। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শাহ দৌলতপুর গ্রামের মাঠে রঙিন ফুলকপির চাষ করতে দেখা গেছে। গ্রামের কৃষক আশেকুল ইসলাম ৪৩শতক জমিতে চার রঙের ফুলকপি চাষ করেছেন।
আশেকুল ইসলাম বলেন,কৃষি অফিসের পরামর্শে গত দুই বছর ধরে এই রঙিন ফুলকপি চাষ করছি। প্রথমে মানুষ হাসাহাসি করতো। কেউ কিনবে কিনা,দাম পাবো কিনা এসব নিয়ে নানা কথা বলতো। এখন ভালো ফলন দেখে তারা জমি দেখতে আসেন। নিজেরাও চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, ৪৩শতক জমিতে তার খরচ হয়েছে ৫৬হাজার টাকা। দেড়লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন ।
কৃষক আবু হানিফ,মিনহাজুল ইসলাম ও আবুল কাশেম বলেন,আশেকুল ইসলামের জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ দেখে প্রথমে আমরা বিস্মিত হয়েছি। এখন দেখলাম বাজারে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। আমরাও আগামীতে এই রঙিন ফুলকপির চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার আফরিণা আক্তার বলেন, লাভজনক হওয়ায় রঙিন ফুলকপি চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। এদিকে সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। কচুতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ থাকে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ থাকে হলুদ ফুলকপিতে। বেগুনি রংয়ের ফুলকপিতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন। যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
সরেজমিন বুড়িচং উপজেলার শাহ দৌলতপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,অন্য সবজির জমির পাশে মাঝে রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। যেন নানা রঙের ফুল বাগান। চোখজুড়ানো ফুল বাগান থেকে কৃষক ফসল তুলছেন। খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা জমির পাশ থেকে ফসল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকের চোখে মুখে দেখা গেল খুশির রঙিন ঝিলিক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ফুলকপি শীকালীন অন্যতম সবজি। এর বাণিজ্যিক মূল্য ও পুষ্টিমূল্য অনেক ভালো। এটা ওষধি গুণ সম্পন্ন ও ক্যান্সার প্রতিরোধী। এর ভোক্তা শ্রেণী রয়েছে। তাই কৃষকরা চাষ করে লাভবান হচ্ছে। রঙিন ফুলকপি সম্ভবত একটু গরম সহিষ্ণু। তাই গরমে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এর বীজ এতো সহজ লভ্য নয়। বীজ আমদানি সহজ করা গেলে বৈচিত্র্যময় সবজির চাষ আরো বাড়বে।