বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নন। গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী শুল্ক সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে বছরে আট বিলিয়ন ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা কমবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য দেওয়া হয়েছিল তা ছিল গোঁজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে তারা মনমতো ডেটা ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে বাংলাদেশকে কমার্শিয়াল রেটে ঋণ নিতে হবে। যা পরিশোধ করা ও ঋণের শর্ত পূরণ করা কঠিন। চীনের ঋণের ব্যাপারে সব সময় একটা সংশয় থাকে। অন্যান্য দেশের ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না।
কোনোভাবেই আমাদের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধে বাস্তবভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়ায় সতর্কতা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছি কি না।
বিগত সরকারের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনানো হতো। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, বাল্যবিবাহ এমনকি প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, সরকার যেভাবে চাইত বিবিএস সেভাবেই তথ্য পরিসংখ্যান দিত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যকে বোগাস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিদেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে প্রমোদ ভ্রমণ করা হয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য জানতে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণে ঋণ আদায় হতো তার চেয়ে বেশি অবলোপন হতো। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ তারা হোটেলে বসে সুদহার ও ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে দিত।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অনিময়-দুর্নীতি, জ্বালানি সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদহার বৃদ্ধি, এফডিআই কমে যাওয়া, বেসরকারি বিনিয়োগের ঘাটতিসহ বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৬ সালে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় হাতে আছে। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে দেশের মর্যাদা আরো বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করবে। নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ বাড়বে, অধিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে।
‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সঠিক পথে আছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম এবং সাংবাদিক মো. তৌহিদুল ইসলাম।