দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দেশে ফেরেন মো. মাসুক। দেশে ফিরে প্রায় ৫-৬ মাস কোনো চাকরি না পেয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন। কয়েক মাস আগে মাসুক ইউটিউবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখে তার বাল্যবন্ধু শামিমকে বিষয়টি জানান। দুই বন্ধু মিলে নিজ এলাকায় চার বিঘা জমি লিজ নেন। তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি ও বাকি দুই বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ শুরু করেন। রূপকথার গল্পের মতো মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষে দুই বন্ধু অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মালাই গ্রামের আউয়াল মিয়ার ছেলে মো. মাসুক ও ফরিদ মিয়ার ছেলে শামিম মিয়া। প্রায় তিন মাস আগে মালাই গ্রামের দুই বিঘা জমিতে তারা মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ শুরু করেন। মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচও তুলনামূলক অনেক কম হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশের খুঁটি, নাইলন সুতা আর জিআই তার দিয়ে চারদিকে মাচা তৈরি করা হয়েছে। ছোট-বড় অসংখ্য শসা মাচায় ঝুলছে। যেদিকে চোখ যায় শসা আর শসা। শসা চাষে দুই বন্ধুর এমন সাফল্য দেখে এখন স্থানীয় অনেকেই শসা চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
স্থানীয়রা জানান, এ বাগানের শসা ফরমালিনমুক্ত এবং অনেক সুস্বাদু। দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ দেখতে আসে আবার অনেকে তরতাজা শসা কিনতেও আসে। এরা দুই বন্ধু এখন গ্রামের সফল চাষি।
চাষি মো. মাসুক জানান, দুই বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে শসা আবাদ করতে জমি ইজারা, পরিচর্যা, সেচ, বীজসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। চারা রোপণের পর থেকে দেড় মাসের মধ্যে তাদের জমিতে শসার ভালো ফলন আসে। বর্তমানে প্রতিদিন তারা ২০০-৩০০ কেজি শসা বিক্রি করতে পারেন। বাজারে শসার ভালো চাহিদা ও দাম থাকায় এ পর্যন্ত তাদের বাগানের প্রায় ৩ লাখ টাকার শসা বিক্রি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাজার দর ভালো থাকলে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে। এতে তিন মাসে খরচ বাদে ২-৩ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৬-৮ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, শুনেছি মাসুক ও শামিম দুই বন্ধু মালচিং পদ্ধতিতে শসা চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন।