জুলাই-আগস্টের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে রাস্তায় শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ফেলে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আদালতে আজ শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজি এম এইচ তামিম। এ সময় প্রসিকিউটর ওমর ফারুক, প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ ও মঈনুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে ফেলে শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে হত্যার ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নাম রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে আগামী ১৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে, ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়। চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির। তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন সাকিল আহমাদ।
এ আইনজীবীর অভিযোগ, গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বামপাশে গুলি করে। বন্দুকের গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বামপাশে অসংখ্য গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।
এ অবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেন এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেন। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে তখনো দেখা যায়। এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে দেন। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত না করে এবং তৎক্ষণাৎ কোনো মৃত্যুর সনদ না দিয়ে ইয়ামিনের মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করলেও পুলিশ বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করে। পরে ইয়ামিনের পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যদের ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মৃত্যু নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে ও সংবাদমাধ্যমে তথ্য দিতে বারণ এবং মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইয়ামিনের পরিবার তাকে সাভার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে দাফন করে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ১৮ জুলাই সাভারে এপিসি থেকে গুলি করে একটি ছেলেকে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। তার মামা শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন।