ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়ের প্রতিচ্ছবি মনে করা হয় কেএল রাহুলকে। দুইজনই বেঙ্গালুরুর। দুইজনই আত্মত্যাগী। ধীরে ধীরে কাজকর্মে, স্বভাবেও যেন রাহুল দ্রাবিড়ের মতো হয়ে উঠছেন তিনি। একসময় টিম ইন্ডিয়ার ভরসার জায়গা ছিলেন সিনিয়র রাহুল। লন্ডনে টেস্ট অভিষেকে রাহুল দ্রাবিড়ের ৯৫ রান ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির শতরানে। ভারতীয় ক্রিকেট সেদিন জন্ম দিয়েছিল দুই তারকার। একজন এসেছিলেন লাইমলাইটে আর অন্যজন ছিলেন অন্তরালে। কিন্তু রাহুল ক্রিজে আছেন মানে আশা আছে। জুনিয়র রাহুলও ভারতীয় ক্রিকেটে সেই জায়গাটাই দখল করে নিচ্ছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে রোহিত শর্মার ৭৬ রানে হয়তো ঢাকা পড়ে যাবে রাহুলের অপরাজিত ৩৪ রান। কিন্তু শেষপর্যন্ত ক্রিজে টিকে থেকে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন লোকেশ রাহুল। শুধু ফাইনাল নয়, সেমিফাইনালেও ছক্কা হাঁকিয়ে টিম ইন্ডিয়াকে জেতান। যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তিনজন নায়ককে বেছে নিতে বলা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে বাদ পড়বেন রাহুল। কিন্তু পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যাবে- পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটেতে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। হলে হয়তো সেই ম্যাচেও তার নামের পাশে নট আউট চিহ্ন থাকত।
বাংলাদেশ ম্যাচে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ ম্যাচে ২৩ রান করেন। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪২ রানে অপরাজিত। ফাইনালে ৩৪ রানে নট আউট। ছয় নম্বরে নেমে ১৪০ রান। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘আনসাং হিরো।’ বাংলায় তার তর্জমা করলে ‘নীরব নায়ক’ বলা যেতে পারে। কেএল রাহুল যেন তাই। শুধু ব্যাট হাতে নয়, অস্থায়ী উইকেটকিপার হিসেবে উইকেটের পেছনেও সমান পারদর্শী। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচটি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি একটি স্ট্যাম্প আউটও করেন। অথচ কোনও বাহ্যিক প্রকাশ নেই।
রবিবার (৯ মার্চ) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যখন সবাই সেলিব্রেশনে মত্ত, নাচানাচি করছে, তখনও মুখে হালকা হাসি নিয়ে সবার সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় রাহুলকে। কোনও উগ্রতা নেই উচ্ছ্বাসে। শুধু চোখেমুখে তৃপ্তি। মরুশহরের এই দৃশ্য মনে করিয়ে দিল প্রায় এক বছর আগের ঘটনা। সেদিন লক্ষ্ণৌয়ের মাঠে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের লাঞ্ছনা সহ্য করেছিলেন। পরবর্তীতে মন্থর ব্যাটিং, স্লো রানরেটের অভিযোগে রাহুলকে রাখেনি সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি। এরপরই নিজেকে ফিনিশারের ভূমিকায় তৈরি করা শুরু করেন।
জাতীয় দলে প্রতিযোগিতা কম ছিল না। ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী ঋষভ পান্ত। যিনি স্পেশালিস্ট উইকেটকিপারের পাশাপাশি ম্যাচ উইনারও। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে দলের প্রথম চয়েস ছিলেন না রাহুল। কিন্তু পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে কোচ গৌতম গম্ভীরের মন জয় করেন। পান্তকে ব্যাকসিটে পাঠিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে হয়ে ওঠেন প্রথম উইকেটকিপার। অবশ্য ২০২৩ বিশ্বকাপেও রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে উইকেটের পেছনে ছিলেন রাহুল। তবে তখন পান্ত ছিলেন না। জীবনের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। তাই রাহুলের সামনে তেমন প্রতিযোগিতা ছিল না। তবে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে চিত্র মোটেই তেমন ছিল না।
ঋষভ ছাড়াও লড়াইয়ে ছিলেন সঞ্জু স্যামসন, ঈশান কিষাণ। সবাইকে হারিয়ে প্রথমে ১৫ জনের দলে জায়গা নিশ্চিত করেন। এরপর প্রথম একাদশে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাঁচটি ম্যাচই খেলেন কেএল। প্রমাণ করেন তাকে প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে বেছে নিয়ে ভুল করেননি কোচ গম্ভীর। টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন না। সেই আক্ষেপ এদিন হয়তো কিছুটা মিটবে। জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন রাহুল। আইপিএল চলাকালীনই বাবা হবেন। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় নিঃসন্দেহে বড় পাওনা।