মণিপুরে আসলে হচ্ছে কি?

0

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে সহিংসতা-বিধ্বস্ত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুরের সমস্ত রাস্তায় মানুষের জন্য অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যটির সরকার। প্রায় দু’বছর পর এদিন সকাল থেকে রাজধানী ইম্ফল থেকে আন্তঃরাজ্য বাস চলাচল শুরু হয়। আর শুরুর দিনই বিক্ষিপ্ত সহিংসতা। 

এদিন সকালের দিকে কাংপোকি এলাকায় মণিপুর রাজ্য পরিবহন সংস্থার একটি বাসে হামলার ঘটনা ঘটে। ইম্ফল থেকে সেনাপতি জেলার দিকে ওই বাসটি রওনা দেওয়ার পর কাংপোকি জেলার গামগিফাই এলাকায় বাসটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে উত্তেজিত জনতা। সাথে সাথে তাতে হস্তক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী। লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দেয়, এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয় বলে খবর। এছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রাইভেট গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীরা সকলেই কুকি উপজাতি সম্প্রদায় ভুক্ত বলে জানা গেছে। এমনকি ইম্ফল-ডিমাপুর জাতীয় সড়ক-২ এর উপরে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়ে একাধিক যানবাহনের গতিপথ রুদ্ধ করে পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। 

এদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ১০টা নাগাদ ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে পার্বত্য জেলা চূড়াচাঁদপুর এবং সেনাপতির দিকে বাসগুলি রওনা দেয়। যদিও এসময় বাসে কোন যাত্রী ছিলেন না। পুরো যাত্রা পথে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাড়িটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে। 

তবে চূড়াচাঁদপুর গামী বাসটি কোনরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বিষ্ণুপুর জেলা অতিক্রম করে কাংভাই এলাকায় পৌঁছায়। অন্যদিকে সেনাপতি জেলা গামী বাসও কোনরকম বাধা প্রাপ্ত হয়নি 

গত ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারের তরফে ইম্ফল থেকে কাংপোকি এবং চূড়াচাঁদপুর পর্যন্ত বাস পরিষেবা চালু করার উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি। কারণ সেসময় ইম্ফলের মইরাংখমে মণিপুর রাজ্য পরিবহন সংস্থার বাস ডিপোতে কোন যাত্রী উপস্থিত ছিলেন না। 

উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ দিল্লিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ‘আগামী ৮ মার্চ থেকে মণিপুরের সমস্ত রাস্তায় মানুষের জন্য অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে এবং কেউ বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ একইসঙ্গে তিনি আরো জানিয়েছিলেন ‘মণিপুরে স্থায়ীভাবে শান্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং এই বিষয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণরূপে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এন বীরেন সিং’এর আচমকা ইস্তফা দেওয়ার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর ১ মার্চে প্রথম নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা মতো ৮ মার্চ থেকে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য বাস পরিষেবা চালু করা হয়। 

সংরক্ষণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে অশান্তির শুরু হয় মণিপুরে। টানা কয়েক মাসের ধরে কুকি ও মেইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে ওই রাজ্যটিতে। বিশেষ করে নারীদের উপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা, গুলির ঘটনা ঘটে। মণিপুরের সহিংসতায় প্রায় আড়াই শতাধিকের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর, আহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। ভিটেহারা আরো প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। এমনকি ওই সহিংসতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের কাছ থেকে কয়েক শতাধিক অস্ত্র লুট হয়। এরপর থেকেই স্তব্ধ ছিল মণিপুরের সাধারণ জনজীবন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here