ছিলেন মুম্বাইয়ের রাস্তায় ফেরিওয়ালা, সেই ভারতীয় এখন দুবাইয়ের অন্যতম ধনী!

0

বাবার মাসিক রোজগার ছিল মাত্র ৭ হাজার রুপি। একটি স্টিলের কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেই স্বল্প রোজগারের সুপারভাইজাইরের পুত্র এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি।

কথা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিক রিজওয়ান সাজনকে নিয়ে। তিনি দানিয়ুব গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। সংযুক্ত আরব আমিরতে যত ভারতীয় থাকেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ধনী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার।

পশ্চিম এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা এই রিজওয়ানের শিকড় কিন্তু গেঁথে রয়েছে ভারতে। ১৯৬৩ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম তার। সেখানেই বেড়ে ওঠা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের রিজওয়ান জীবনের লড়াই শুরু করেন বাবাকে হারানোর পর।

মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারান রিজওয়ান। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বড়। ফলে সংসারের ভার এসে পড়ে তার উপরেই।

রাস্তায় রাস্তায় ফেরিওয়ালার কাজ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি, কোনও কাজই প্রায় বাদ দেননি রিজওয়ান। তার ছোটবেলার দিনগুলি ছিল কঠিন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। যার ফলশ্রুতি আজকের ১৮ হাজার কোটির সম্পত্তি।

একটি ছোট গাড়িতে মুম্বাইয়ের রাস্তায় প্রথম প্রথম কিছু দিন বই নিয়ে ঘুরতেন রিজওয়ান। সেই বই কেউ কিনতেন, কেউ আবার অবহেলায় এড়িয়ে যেতেন। বইয়ের গাড়িতে কখনও কখনও জুড়ত বাজি, দোলের রং কিংবা অন্যান্য টুকিটাকি।

রিজওয়ান লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধও বিক্রি করেছেন দীর্ঘদিন। গালফ নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘দিন আনি দিন খাই অবস্থা ছিল আমাদের। জীবন খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিছুটা বাড়তি রোজগারের জন্য দুধ বিক্রি শুরু করেছিলাম।’’

বই আর দুধ বিক্রি করতে করতে ১৮ বছরে পা দেন রিজওয়ান। তার জীবনের মোড় ঘোরে ১৯৮১ সালে। কাকার কথায় সুদূর কুয়েতে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে মাসিক ১৮ হাজার রুপিতে শুরু হয় নতুন সংগ্রাম।

কুয়েতে দীর্ঘ ৮ বছর ছিলেন রিজওয়ান। প্রশিক্ষণরত সেলস কর্মী থেকে এই ৮ বছরে তিনি সেলস ম্যানেজারে পরিণত হন। কিন্তু ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হুসেন কুয়েত আক্রমণ করলে আবার বদলে যায় রিজওয়ানের জীবনের সমীকরণ।

কুয়েত ছেড়ে মুম্বাই ফিরে আসেন তিনি। কাজের খোঁজে সদা চঞ্চল এই তরুণ কিছুদিনের মধ্যেই ফের পশ্চিম এশিয়ার টানে বিমানে চড়ে বসেন। এবার গন্তব্য দুবাই। সেখানে দালাল হিসেবে প্রাথমিক ভাবে রোজগার শুরু হয়।

বহুতল নির্মাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দালালি করতেন রিজওয়ান। নিজের পরিশ্রম আর দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবসায় সাফল্যের স্বাদ পান। নিজস্ব ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এর পরেই।

১৯৯৩ সালে রিজওয়ানের হাত ধরে দানিয়ুব গোষ্ঠীর পথ চলা শুরু। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি থেকে বহুতল নির্মাণের ব্যবসা-সব ক্ষেত্রেই হাত পাকিয়েছে এই গোষ্ঠী।

রিজওয়ানের নিজস্ব অফিসে তার প্রথম কর্মচারী ছিলেন এক নারী। বর্তমানে তিনি সমীরা সাজন, রিজওয়ানের স্ত্রী। তার হাত ধরে যে সংস্থার সূচনা হয়েছিল, আজ তার কর্মচারীর সংখ্যা ৪ হাজারের কাছাকাছি।

বিশ্বের নানা প্রান্তে দানিয়ুব গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। তাদের সংস্থার অফিস রয়েছে অন্তত ৫০টি শহরে। ২০১৯ সালের হিসেবে এই গোষ্ঠীর বার্ষিক আয় প্রায় ১৩০ কোটি ডলার।

সংযুক্ত আরব আমিরতে ফোর্বসের ১০০ জন ধনী ভারতীয়ের তালিকায় ২০১৫ সালে সপ্তম স্থানে ছিলেন রিজওয়ান। ২০১৮ সালে ওই একই তালিকায় অষ্টম স্থানে তার নাম ছিল।

২০১২ সালে দানিয়ুব ওয়েলফেয়ার সোসাইটি চালু করেন রিজওয়ান। এই সংস্থা তরুণ-তরুণীদের বিনামূল্যে ভাষা শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করে থাকে। সমাজকর্মী হিসেবেও রিজওয়ানের পরিচিতি গড়ে উঠেছে আরব মুলুকে।

সূত্র : আনন্দবাজার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here