বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইসমাইলি মুসলিমদের নতুন আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে প্রিন্স রহিম আল-হুসেইনিকে ‘আগা খান’ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর বাবা প্রিন্স করিম আল-হুসেইনি (চতুর্থ আগা খান)-এর মৃত্যুর পর তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
সিএনএন জানিয়েছে, ৫৩ বছর বয়সী প্রিন্স রহিম আল-হুসেইনি, তাঁর বাবার ইচ্ছা অনুসারেই ইসমাইলি মুসলিমদের ৫০তম বংশগত ইমাম এবং পঞ্চম আগা খান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) তাঁর বাবা পর্তুগালে মারা যান।
আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক এবং ইসমাইলি ধর্মীয় সম্প্রদায় এক বিবৃতিতে জানায়, “হিজ হাইনেস” চতুর্থ আগা খান প্রিন্স করিম আল-হুসেইনি ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম বংশগত ইমাম ছিলেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
প্রিন্স রহিম আগা খান, প্রিন্স করিম আগা খানের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের (AKDN) বিভিন্ন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই সংস্থা স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, শিক্ষা এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে। ৩০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং এর বার্ষিক বাজেট প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার, যা অলাভজনক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ।
আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, “প্রিন্স রহিম জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোতে বিশেষভাবে আগ্রহী।”
আগা খান ও তার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার
প্রয়াত প্রিন্স করিম আল-হুসেইনি আগা খান ১৯৫৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের কাছ থেকে ‘হিজ হাইনেস’ উপাধি লাভ করেন। এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তাঁর দাদা (তৃতীয় আগা খান) তাঁকে ইসমাইলি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন।
প্রিন্স করিম আগা খান একাধারে ব্যবসায়ী, সমাজসেবক এবং ইসলামি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের রক্ষক ছিলেন। তিনি মুসলিম সমাজ ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তবে রাজনৈতিক বিষয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে তিনি বিরত থাকতেন।
বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি সম্প্রদায় ও তাদের অবদান
আগা খানের নামে পরিচালিত হাসপাতালগুলো বাংলাদেশ, তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো উন্নয়নশীল অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছে।
ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ইরান, সিরিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করতেন। তবে পরবর্তীতে পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াতেও বসতি স্থাপন করেছেন।
তাঁরা তাঁদের আয়ের ১২.৫ শতাংশ (সাড়ে ১২ শতাংশ) পর্যন্ত আগা খান ফান্ডে দান করাকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন।
নতুন আগা খান প্রিন্স রহিমের সহোদর দুই ভাই ও এক বোন রয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন