আমাদের মেরুদণ্ডের হাড়গুলোকে বাংলায় বলা হয় কশেরুকা ও মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় ভাট্রিব্রারা, মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মধ্যে ফাঁকা থাকে যেখানে এক ধরনের ডিস্ক থাকে যাকে-ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক বলে। এই ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায় তখন তাকে ডিস্ক প্রলেপস বলে।
ডিস্ক প্রলেপস কেন হয়?
অনেক কারণে ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে। যেমন –
-আমাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে যে স্পাইনলে লিগামেন্ট ও মাংসপেশি থাকে এগুলো দুর্বল হয়ে গেলে। -অসচেতন বা ভুলভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কিছু ওঠাতে গেলে।
-আঘাত পেলে বা উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে।
-দীর্ঘক্ষণ নিচে বসে কাজ করলে। -এমনকি সামনের দিকে ঝুঁকে জুতার ফিতা বাঁধতে গেলে অথবা বেসিনে মুখ ধুতে গেলেও ডিস্ক প্রলেপস হতে পারে।
ডিস্ক প্রলেপস কোথায় কোথায় হয়ে থাকে?
সাধরণত ডিস্ক প্রলেপস আমাদের ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশি হয়ে থাকে। সারভাইক্যাল স্পাইনের সি ৫-৬ ও সি ৬-৭ লেভেলেও লাম্বার স্পাইনে এল ৪-৫ ও এল ৫- এস ১ লেভেলে বেশি হয়।
ডিস্ক প্রলেপস কাদের বেশি হয়?
এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হয়। তবে পুরুষের তুলনায় মহিলারা এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
ডিস্ক প্রলেপসের লক্ষণ কী?
ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন :
-ঘাড়ে ব্যাথা, -ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় ও হাতে তীব্র ব্যথা হয়।
-হাত ঝুলিয়ে রাখলে ও বিছানায় শুলে বেশি ব্যথা করে।
-হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়। -হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে।
-অনেক ক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে ইত্যাদি।
কোমর বা লাম্বার স্পাইন :
-কোমরে ব্যথা, -ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়।
-পা ঝিনঝিন ভার অবশ অবশ মনে হয়।
-খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাঁটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না; কিন্তু কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে আবার কিছুক্ষণ হাঁটতে পারে। -পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়। -পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভব করে। -পায়ের শক্তি কমে যায় ও অনেক ক্ষেত্রে পায়ে মাংসপেশি শুকিয়ে যায়।
-অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রসাব ও পায়খানায় কন্ট্রোল থাকে না।
ডিস্ক প্রলেপস নির্ণয় করবেন কীভাবে?
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যালি পরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্ত স্পাইনের এমআরআই বা ম্যাগনেটিক রিজোনেনস ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে কোন লেভেলে কতটুকু ডিস্ক প্রলেপস তা সঠিকভাবে পরিপূর্ণভাবে নির্ণয় করে থাকেন।
চিকিৎসা : এর চিকিৎসা হলো ওষুধের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বিশ্রাম অর্থাৎ হাঁটাচলা বা মুভমেন্ট করা যাবে না, এমন অবস্থায় থেকে সঠিক ফিজিওথেরাপি, এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ২-৪ সপ্তাহ ফিজিওথেরাপি হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে ও চিকিৎসক নির্দেশিত থেরাপিউটিক ব্যায়াম করলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে। এবং সুস্থ হওয়ার পর কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- ১. সামনের দিকে ঝুঁকে ভারী কাজ করবেন না।
২. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন।
৩. ভারী ওজন তোলা নিষেধ।
৪. শক্ত বিছানায় শোবেন।
৫. ভ্রমণ ও হাঁটাচলার সময় সারভাইক্যাল কলার অথবা লাম্বার করসেট ব্যবহার করবেন।
৬. চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করবেন। তাই এসব বিষয় নিয়ে অবহেলা না করে আমাদের সতর্ক হতে হবে। প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
লেখক: চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।