পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হলে জলাশয় বাঁচানো এবং সবুজকে বাঁচানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। জলাশয় না বাঁচলে ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না। একটু বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরের অনেক এলাকা ডুবে গিয়ে কক্সবাজারের রূপ ধারণ করে। খাল বা জলাধার পুনরুদ্ধার করা গেলে এই অবস্থা বদলাবে।
রবিবার বিশ্ব জলাভূমি দিবসকে উপলক্ষ্য করে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে ‘রি-ওয়েট ঢাকা’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সত্যিকার অর্থেই ঢাকার খালগুলোকে দূষণমুক্ত করা গেলে এগুলো বাফার জোন হিসেবে কাজ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ঢাকা শহরের ১৯ খালকে দখল-দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। দুঃখজনক বিষয় হলো, ৫৩ বছরেও এই শহরে কার্যকর সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। খালগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। মরে যাওয়া খাল খনন করতে গেলে সেখানে তোষক-বালিশ বা প্লেট-বালতি পাওয়া যায়। এক-দেড়বছরে আমরা এই সামগ্রিক চিত্র বদলাতে পারব না, তবে সমাধানের পথ দেখাতে পারব। স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেক বা খালের পাড়ে শাকসবজির আবাদ করা হলে যেমন সেখানকার পরিবেশ ভালো থাকবে, তেমনি তা খাদ্যের চাহিদাও অনেকাংশে মেটাবে।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি যে, রাজউক এই প্রথমবারের মতো একটি বিল উদ্ধার করার কাজ হাতে নিয়েছে। বিলটি ৯ একরের মতো। বিলটিকে ভরাট করে একটা হাউজিং কোম্পানি প্লট বিক্রি করছে, যেটি কেরানীগঞ্জে। রাজউক এ প্রথমবারের মতো বিলটিকে উদ্ধারের কাজ হাতে নিয়েছে। যেটুকু সময় আছে, যতটুকু কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেয়া যায়, আমরা তা চেষ্টা করব।
উপদেষ্টা বলেন, ভ্রান্ত অর্থনৈতিক যুক্তি দিয়ে আমাদের রাস্তা থেকে যেন সরাতে না পারে, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক প্রতিরোধ আসবে, সেগুলো আমরা একসাথে মিলে প্রতিরোধ করব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রি-ওয়েট প্রকল্পের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ প্রথম সেশনের সমাপনী বক্তব্যে পুরো প্রকল্পের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি ঢাকার জলাভূমি রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমর্থন, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, সুইডেন দূতাবাসের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রথম সচিব নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম, সাংবাদিক ইফতেখার মাহমুদ এবং ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা এ এস এম মারজান নূর।
রি-ওয়েট প্রকল্পে আরও সহযোগিতা করেছে রিভার্সিং এনভায়রনমেন্টাল ডিগ্রেডেশন ইন আফ্রিকা অ্যান্ড এশিয়া (রিডা), ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি) এবং ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। কনসোর্টিয়াম মেম্বার হিসেবে আরও রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড, শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটি, স্মিথ কলেজ, নগর আবাদ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ও প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন।
উল্লেখ্য যে, রি-ওয়েট মূলত যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের অর্থায়নে তৈরি একটি গবেষণা-ভিত্তিক উদ্যোগ, যা ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড এবং বাংলাদেশের রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ কনসালট্যান্টস নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এর আওতায় ঢাকার গুলশান-বনানী লেকের একটি অংশ পুনরুদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে।