সার্বিয়ায় রেলওয়ে স্টেশনের ছাদ ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করেছে। সরকারের অদক্ষতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভের মুখে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগ করলেও আন্দোলন থামেনি।
গত বছরের নভেম্বর মাসে সার্বিয়ার নোভি সাদ শহরের একটি রেলওয়ে স্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই হাজার হাজার মানুষ সরকারের জবাবদিহি চেয়ে রাজপথে নেমে আসে, যার নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সড়ক অবরোধ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখলসহ বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
গত সপ্তাহে এই বিক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে এটি সার্বিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হয়। আন্দোলন এখন শতাধিক শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী দেজান বাগারিক বলেন, “সার্বিয়ার ইতিহাসে এমন গণবিক্ষোভ আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষ সত্যিই সরকারের দুর্নীতিতে ক্লান্ত। এই সরকার ভয়াবহ মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত।”
গোপন নথি প্রকাশ, আন্দোলন অব্যাহত
বিক্ষোভকারীদের দাবি, নোভি সাদ রেলওয়ে স্টেশনটি চীনের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত হলেও নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো নজর দেওয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার দায় অস্বীকার করায় জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
মানবাধিকার আইনজীবী চিতোমির স্টোজকোভিচ এই ঘটনায় ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন, যা শেষ পর্যন্ত প্রসিকিউটরদের তদন্ত শুরু করতে বাধ্য করে। তিনি বলেন, “নির্মাণে কোনো স্বচ্ছতা ছিল না, কোনো পাবলিক টেন্ডার হয়নি। দুর্ঘটনার সঠিক তদন্তও হয়নি। বরং সরকার সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”
আইনজীবী স্টোজকোভিচের মতে, “মানুষ প্রেসিডেন্ট ভুসিচের ও তার সরকারের পদত্যাগ চায়।”
তবে প্রেসিডেন্ট ভুসিচ এই বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ আক্রমণের মুখে।”
আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভে কোনো পরিবর্তন আসেনি। পরে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে রেলওয়ে স্টেশন ধসের গোপন নথি প্রকাশ করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ এত দ্রুত শেষ হবে না।
বেকারত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছে
দেশটিতে ক্রমেই বাড়তে থাকা বেকারত্বের হার এই বিক্ষোভকে আরও তীব্র করে তুলছে। তরুণরা কাজের খোঁজে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে সরকারের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বাড়ছে।
এর আগে, গত বছর নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগে বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। তবে এবারের বিক্ষোভে সাধারণ জনগণ ও ছাত্রসমাজও যুক্ত হয়েছে, যা সরকারের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
বিরোধী দলগুলো একটি অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি জানিয়েছে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে বলে তারা মনে করে। তবে প্রেসিডেন্ট ভুসিচ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “সার্বিয়ার জনগণ দায়িত্বশীল নেতাদের চায়, এমন রাজনীতিবিদদের নয়, যাদের প্রতি জনগণের আস্থা নেই।”
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ভুচেভিচের উত্তরসূরি হিসেবে তিন থেকে চারজনের নাম বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো যোগ্য প্রার্থী থাকলে তাকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল জাজিরা