দুইশো বছরের প্রাচীন হাটে ঘণ্টায় বিক্রি ২০০ মণ দুধ

0

বগুড়ায় দুধের হাটে ঘণ্টায় বিক্রি হয় ২০০ মণ গরুর দুধ। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। দুইশো বছরের প্রাচীন এই হাটে শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার উল্লাপাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকেও খামারি ও ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা নিয়মিত দুধ বিক্রি করতে আসেন।

প্রতিদিন বেলা ১২টার দিকে শেরপুর পৌরসভার উত্তর সাহাপাড়া মহল্লায় শিশুপার্ক চত্বরে হাট বসে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগম হয়ে ওঠে হাট প্রাঙ্গণ। দর-দাম ঠিক করে পছন্দ অনুযায়ী দুধ কিনেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পৌর উত্তর সাহাপাড়া মহল্লায় শিশুপার্ক চত্বরে এক ঘণ্টার দুধের বাজার বসে। সেখানে প্রতিদিন প্রায় দুইশো মণ দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। এর আগে বাজারটি ছিল শহরের সান্যালপাড়া সড়কের পাশে। পরে বাজারটিকে শিশুপার্ক চত্বরে আনা হয়। বাজারে একেকটি ভ্যানে ৫ থেকে ৭টি করে সিলভারের পাতিল ভরে বিক্রির জন্য দুধ বাজারে আনা হয়। প্রতিটি ভ্যানে দুই থেকে তিন মণ দুধ থাকে। বাজারে এমন ভ্যানের সংখ্যা শতাধিক। এ ছাড়া অনেকে জারকিনে দুধ ভরে সাইকেলে, হাতে করে ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে এই হাটে নিয়ে আসেন।

বাজারটির ইজারাদার রায়হান রহমান জানান, এটি মূলত এক ঘণ্টার বাজার। এই সময়ের মধ্যে বাজারে দুইশো মণ দুধ কেনাবেচা হয়। শেরপুর উপজেলার পাশাপাশি বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার অন্তত ৩ শতাধিক দই ও মিষ্টি ব্যবসায়ী এই বাজারে নিয়মিত দুধ কিনতে আসেন। সেখানে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে দুধ বিক্রি হয়।

শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি, গাড়িদহ, খামারকান্দি, খানপুর, মির্জাপুর, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের অন্তত ২০০টি গ্রামের কয়েক’শ কৃষক গাভির দুধ বিক্রির জন্য এ বাজারে যান। এ ছাড়া গরুর খামারিরাও এ বাজারে দুধ বিক্রি করেন। কেউ কেউ মালিক বা খামারির কাছে দুধ কিনে সেখানে বিক্রি করেন। বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দুধ কেনেন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে দুধ বিক্রি করতে আসা শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি ইউনিয়নের কৃষক মানিক মিয়া জানান, প্রতিদিন তিনি ৩০ থেকে ৩৫ লিটার দুধ বিক্রি জন্য নিয়ে আসেন। অল্প সময়ের মধ্যে বিক্রিও হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এই হাটকে কেন্দ্র করে শেরপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকে গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া বেশিভাগ কৃষকদের বাড়িতে দুধের গাভি রয়েছে। এতে তাদের প্রত্যেকের সংসারের ব্যয় মিটছে। বাজারে প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

শেরপুর শহরে দই ও মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মজিবুল হক জানান, তিনি বাজারে আসা খামারিদের নিকট থেকে ৫ থেকে ৭ মণ দুধ কেনেন প্রতিদিন। এক ঘণ্টার এই দুধের বাজারে দ্রুতই এসব দুধ বিক্রি হয়। তিনি শুধু একা নন, এমন আরও শতাধিক ব্যক্তি সেখান থেকে দুধ কিনেন।

তিনি আরও বলেন, শেরপুর উপজেলায় আড়াই থেকে তিন শতাধিক দই ও মিষ্টি উৎপাদনকারী কারখানা আছে। স্থানীয় এই বাজার থেকে তারা দুধ কিনে থাকেন। শেরপুরের চাহিদার পাশাপাশি পাশের শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও নন্দীগ্রাম উপজেলা থেকেও অনেক কারখানামালিক বাজারটি থেকে দুধ কিনে থাকেন।

শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নিয়ায কাযমীর রহমান জানান, প্রাচীন এই ঐতিহ্য বাজারে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার গরুর দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। দুধের বাজারটি বগুড়াসহ সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এ ছাড়া শেরপুর উপজেলায় ৭ হাজার ২৫০টি দুগ্ধখামার রয়েছে। এসব খামারে প্রতিদিন উৎপাদিত হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার লিটার দুধ। শেরপুরের দুধ আশপাশের উপজেলাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here