ঘাঘট, মানস, বুড়াইল, শালমারা এখন স্মৃতির খেয়ায়!

0

এক সময় পাল তুলে নৌকা চলত। খেয়াঘাটকে ঘিরে ছিল জমজমাট ব্যবসা-বাণিজ্য। নদীবন্দর ঘিরে ছিলো মানুষের পদচারণায়। দখল-দূষণের কারণে রংপুরের চার নদ-নদী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আবহাওয়া ও জলবাযুর পরিবর্তন, খরা মৌসুমে তীব্র খরা আবার শীত মৌসুমে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে প্রকৃতি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও খরা মৌসুমে অপরিকল্পিত ভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। রংপুরের মানস, ঘাঘট, বুড়াইল, শালমারা নদী দখল করে গড়ে উঠছে বসতি এবং ফসলের ক্ষেত। অনেক স্থানে এসব নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না।  

এক সময় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, সদর উপজেলা, কাউনিয়া ও পীরগাছায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃতি ছিল মানস নদীর। এ নদীর এখন কোন অস্তিত্ব নেই বললে চলে। জমির বুক চিড়ে বেড়িয়ে এসেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। নৌকার পরিবর্তে সেখানে চলছে এখন  কলের লাঙ্গল। ৪ দশক আগেও মানস নদীতে নৌকা চলেছে পাল তুলে। হাজার হাজার জেলে মাছ মেরে জীবীকা নির্বাহ করেছে। সেই মানসের বুকে এখন ফসলের আবাদ হচ্ছে। মানস নদীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতো খেয়াঘাট ছিল। সেগুলো এখন অতীত। 

মানস নদীরে কাউনিয়া উপজেলায় সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান চাষ করার জন্য মানস নদী জুড়েই ধানের বীজতলা তৈরী করেছেন। টেপামধুপুর লালমসজিদ এলাকার কৃষক মোঃ আমিন জানান, মানস নদীতে এবার খুব সহজেই বীজতলা তৈরি করা গেছে। কৃষক শফিকুল জানান, নদীতে পানি কম থাকায় এবং কাদা থাকায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই বীজতলা তৈরি করা গেছে। তাদের মত অনেকেই নদীর বুকে চাষাবাদ করছেন। এসব অবৈধ দখল হলেও  প্রতিকারে কেউ এগিয়ে আসছে না।
 
কাউনিয়ার রাজনীতিবিদ ও লেখক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এক সময় মানসের বুকচিড়ে বারো মাস নৌকা চলত। এখন মানস নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুসকিল। নদী মরে গিয়ে সেখানে হয়েছে আবাদি জমি। অনেকে নদীর জমি দখল করে আবাদ করছেন। এ বিষয়ে কারও কোন পদক্ষেপ নেই।  

একই অবস্থা ঘাঘট নদীর। রংপুর শহরের অদূরে ঘাঘটকে কেন্দ্র করেই এসময় গড়ে উঠেছিল নদী বন্দর। ঘাঘট নদীর ওপর দিয়ে অনেক স্থানেই ব্রীজ হয়েছে। উন্নয়নের  নামে অনেক স্থান দখল হয়েছে। ঘাঘটের বুকে অনেক স্থানে গড়ে উঠেছে ইমারত। একই অবস্থা, বুড়াইল, শালমারা নদীর। এসব নদী জেগে ওঠা চর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি ও ফসলের ক্ষেত। 

রিভারাইন পিপলের পরিচালক, নদী বিষয়ক গবেষক ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এসব নদীতে শত শত অবৈধ দখলকারী রয়েছে। নদী দখলকারিদের উচ্ছেদ ও নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন রংপুরে মানস, বুড়াইল, শালমারা ও ঘাঘট নদ দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here