গত বুধবার মাদারীপুরের শিবচরে ফজিলাতুন্নেছা নামে এক বৃদ্ধার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলা তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে সোহাগ হাওলাদার (২৮) নামের এক যুবক ওই বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে ওই যুবককে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ।
শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
গত বুধবার শিবচরের পাচ্চর ইউনিয়নের হোগলার মাঠ গ্রাম আকন বাড়ীর পশ্চিম পাশে পরিত্যক্ত ভিটায় মেহগনি বাগানে নিহতের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। পরে নিহতের মেয়ে রেখা আক্তার অজ্ঞাত নামে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধা খুনের রহস্য উদঘাটনসহ আসামিকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি দুপুরে নিজবাড়ি থেকে ছেলেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য পাশের ছোট কুতুবপুর বাজারে যায় ফজিলাতুন্নেছা। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৮০ বছর বয়সী এই নারী নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। নিখোঁজের ১০দিন পর ২২ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে স্থানীয়রা বাড়ির পাশের হোগলার মাঠে পাতা আনতে গেলে একটি বস্তার মুখ রশি বাঁধা অবস্থায় দেখলে সন্দেহ হয়। স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এরপর নিখোঁজের ব্যবহারকৃত মোবাইলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেই সূত্র ধরেই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সোহাগ হাওলাদার নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সোহাগ বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলায় তীব্রভাবে আসক্ত ছিলেন। একপর্যায়ে জুয়া টাকার জন্য ওই বৃদ্ধার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল,একটি মোবাইল চুরি করতে গিয়ে তাকে অজ্ঞান করার জন্য শ্বাসরোধ করে। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায় সোহাগ। গ্রেফতারকৃত সোহাগ শিবচর উপজেলার বৈকণ্ঠপুর গ্রামের মো. মফিজ হাওলাদারের ছেলে। নিহত ফজিলাতুন্নেছা একই এলাকার মৃত আবদুর রহমান আকনের স্ত্রী।
নিহতের মেয়ে রেখা আক্তার বলেন, সামান্য সোনার জন্য আমার মায়ের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আমার মাকে যে খুন করেছে সেই দোষী সোহাগের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোহাগ আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও জানান,সোহাগ দীর্ঘদিন থেকে অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। জুয়ার টাকার জন্য বৃদ্ধাকে খুন করে স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে এইগুলো বিক্রি করে অনলাইনে জুয়া খেলে। নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বিক্রি করেছিল। সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাত্র ৫০০ টাকায় মোবাইটি বিক্রি করে। আর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে ৪০হাজার টাকায়।