দ্বিতীয় মেয়াদে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের পর এক দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তার ঘোষণার মধ্যে রয়েছে পানামা খাল পুনরুদ্ধার, মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা এবং জ্বালানি খাতে নতুন নীতিমালা।
ট্রাম্প শপথ শেষে বলেন, পানামা খালে আমেরিকান জাহাজের কাছ থেকে অযৌক্তিক পরিমাণ অর্থ নেওয়া হচ্ছে, এবং আমাদের জাহাজকে সঠিক সেবা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা পানামা খাল ফিরিয়ে নিচ্ছি। তিনি দাবি করেন, এই খাল তৈরির সময় ৩৮ হাজার আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন। তবে তার এই দাবির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার তথ্যানুসারে, পানামা খাল নির্মাণের সময় প্রায় ৫,৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অধিবাসী।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হবে, যারা অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ ঠেকাবে। তিনি আরও জানান, হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ট্রাম্প তার বহুল আলোচিত ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি পুনর্বহালের ঘোষণা দেন। এই নীতির আওতায়, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রক্রিয়া চলাকালীন অভিবাসীদের মেক্সিকোতেই অবস্থান করতে হবে।
মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন
ট্রাম্প আরও জানান, মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে এটি ‘আমেরিকান উপসাগর’ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি মেক্সিকোর মাদক গ্যাংগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের কার্যক্রম ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেন।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাতীয় জ্বালানি শক্তি জরুরি অবস্থা’ জারি করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশজুড়ে জ্বালানি ও অন্যান্য মূল্যবান পদার্থ আহরণের জন্য খনন কাজ আরও বিস্তৃত করা হবে। তাছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন ও কেনার প্রণোদনা বাতিল করার কথাও বলেন তিনি।
ট্রাম্প তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বিদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তার মতে, এই নীতির মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং জনগণ ধনী হতে পারবে। তবেসিএনএন জানায়, বিদেশি রপ্তানিকারকদের পরিবর্তে এই বাড়তি শুল্কের ভার সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের বহন করতে হতে পারে, যেমনটা এর আগে চীনা পণ্যের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের এইসব পদক্ষেপ তার সমর্থকদের কাছে প্রশংসিত হলেও সমালোচকদের মতে, তার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবুও, তিনি তার বক্তব্যে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং তার ঘোষণাগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল