২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। হামাসকে নির্মূল করার চেষ্টায় ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলেও তা কেবল সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশটির জন্য বিপদ বয়ে এনেছে। গাজার ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং বেসামরিক জনগণের বিপর্যয় বিশ্বজনমতের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। একসময় পশ্চিমা বিশ্বের অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়া ইসরায়েল এখন অনেক দেশেই সমালোচনার মুখে।
পশ্চিমা সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিশালী সমর্থন পেয়ে আসছিল। কিন্তু গাজার সাম্প্রতিক সংঘর্ষে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে অনেক দেশ তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করছে। যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েল পাশে পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান বদলে যায়।
নতুন প্রজন্মের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইসরায়েল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ইহুদি কিশোর এখন হামাসের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪২ শতাংশ কিশোর মনে করছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা এই নতুন প্রজন্ম ইসরায়েলের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বৈশ্বিক বর্জন আন্দোলনের উত্থান
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বর্জন আন্দোলন দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। প্রথমদিকে এই আন্দোলনকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এখন এটি ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বৈশ্বিক সমর্থন পেয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এই বর্জন আন্দোলন তাদের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েল
ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পাশাপাশি, পশ্চিমা দেশগুলোতেও নতুন নতুন মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ বিভাজনের শিকার ইসরায়েল
গাজার যুদ্ধ ইসরায়েলের ভেতরেও বড় ধরনের বিভক্তি তৈরি করেছে। ধর্মীয় ইহুদিদের একাংশ সামরিক সেবা থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে সেক্যুলার এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ইহুদিদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এতে দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ব্যাপকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা
গাজায় চলমান সংঘাতের অবসানে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছে। ১৫ মাসের এই সংঘাতে ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আগামীকাল রবিবার থেকে চুক্তি কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তির প্রথম ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে এবং হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬ দিনের মধ্যে গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। তৃতীয় ধাপে মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় গাজার পুনর্গঠন কাজ শুরু হবে।
তবে গত দুই দিনে ইসরায়েলি হামলায় ১১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৮ শিশু ও ৩১ নারী রয়েছে। ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে চুক্তি সফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল