স্মার্টফোন ডেটার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অবস্থান বা ঠিকানা ট্র্যাক করে এমন বড় এক মার্কিন কোম্পানি রাশিয়ান হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। কোম্পানিটির কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেছে সাইবার অপরাধীরা।
দুই সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বিষয়টি উদঘাটন করেন। এর মধ্যে এক ব্যক্তি বেহাত ফাইলের এক বিশাল ভাণ্ডার অনলাইনে পোস্ট করেছেন। এর সঙ্গে নরওয়ের সরকারকে কোম্পানিটির পাঠানো একটি নোটিশও রয়েছে বলে জানা গেছে।।
এ ধরনের হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে লোকেশননির্ভর বিভিন্ন জনপ্রিয় বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন এমন লাখ লাখ মানুষের অবস্থানের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এমন অ্যাপের মধ্যে রয়েছে টিন্ডার, স্পটিফাই, সিটিম্যাপার, মামসনেট ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজসহ শত শত কোম্পানির নাম।
হ্যাকাররা মার্কিন লোকেশন ট্র্যাকিং ফার্ম ‘গ্রেভি অ্যানালিটিকস’কে টার্গেট করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থাটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে মানুষের সুনির্দিষ্ট গতিবিধি’সহ লোকেশনবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে ও পরে সে তথ্য বিভিন্ন কোম্পানি বা সরকারকে সরবরাহ করে। ধারণা করা হচ্ছে, হ্যাকিংয়ের ফলে ১০ টেরাবাইটেরও বেশি তথ্য চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া তথ্যের নমুনা এক সুপরিচিত হ্যাকিং ফোরামেও শেয়ার করেছে রাশিয়ানভাষী হ্যাকাররা।
এসব নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন অনলাইন প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার জন্য টুল সরবরাহক কোম্পানি ‘প্রেডিক্টা ল্যাব’-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যাপটিস্ট রবার্ট। এতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ও সরকারি অফিসের আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে মানুষের বাড়ি ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘চেক পয়েন্ট’-এর গ্রায়েম স্টুয়ার্ট স্কাই নিউজকে বলেছেন, “এটি এক নতুন ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনা। এটি কেবল ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নয়, বরং তাদের জীবন ও তারা কী করছেন এবং কীভাবে করছেন সে সম্পর্কেও বেশ গোপন তথ্যও রয়েছে এতে।”
গোটা বিশ্বে ব্যবহৃত হাজার হাজার অ্যাপের ডেটানির্ভর বাণিজ্য করে এ হ্যাকিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ‘গ্রেভি অ্যানালিটিকস’ কোম্পানি। স্টুয়ার্ট বলেছেন, ব্যবহারকারীরা বাসে বা টয়লেটে ফোন ব্যবহার করছেন কি না সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য পর্যন্ত রয়েছে কোম্পানিটির কাছে।
এ হ্যাকিংয়ের তথ্য প্রথম প্রকাশ করে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ‘৪০৪ মিডিয়া’। একইসঙ্গে হ্যাকিংয়ের নমুনার তথ্যও প্রকাশ করেছে তারা। এ ধরনের হ্যাকিং থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন ছাড়া তাদের অবস্থান বা লোকেশন বন্ধ রাখার পাশাপাশি ওয়াইফাইও বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন রবার্ট। এছাড়াও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের তাদের বিজ্ঞাপনী আইডি মুছে ফেলা ও আইওএস ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সেটিংসে থাকা ‘বিভিন্ন অ্যাপকে ট্র্যাক করার অনুমতি’ বন্ধেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তথ্য সূত্র – ইয়াহু নিউজ ইউকে।