ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের ১০০ দিনের নৃশংস হামলায় প্রায় পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সম্ভাব্য মধ্যস্থতা চুক্তির আলোচনার মধ্যে হামলার মাত্রা আরও তীব্র হয়েছে।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে গাজার একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, অক্টোবরের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে আরও সাড়ে নয় হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গতকাল গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরায়েলি অবরোধকে ‘জাতিগত নিধন, বাস্তুচ্যুতি এবং ধ্বংসের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ওই অঞ্চলের লাখো মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, উত্তর গাজা এখন এক ‘ভুতুড়ে এলাকা’। সেখানে ব্যাপক ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। কিছু মানুষ ওই অঞ্চল ছেড়ে না যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, গাজা উপত্যকার প্রতিটি স্থানে ফিলিস্তিনিদের পরিকল্পিতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। আপনি স্কুলে, আশ্রয়কেন্দ্রে, অস্থায়ী শিবিরে বা এমনকি হাসপাতালে থাকুন না কেন, তাতে কিছুই আসে যায় না।
উত্তর গাজার প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্র কামাল আদওয়ান হাসপাতাল গত ডিসেম্বরের শেষে ইসরায়েলি বাহিনীর আগুনে পুড়ে যায়। এটি তাদের অবরোধেরই অংশ ছিল। এরমধ্যেই গ্রেপ্তার হন হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া। তার অবস্থান বা পরিণতি সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
ইসরায়েলি রাজনীতিকদের পাশাপাশি বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠীগুলো উত্তর গাজায় বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ থামার কোনো ইঙ্গিত এখনও দেখা যাচ্ছে না।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানায়, ইসরায়েল এ পর্যন্ত অন্তত ৪৬ হাজার ৫৬৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন আহত হয়েছেন। আর গত এক দিনে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা থেকে বাদ যায়নি এই উপত্যকার মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, এমনকি শরণার্থী শিবিরও। সূত্র: আল-জাজিরা