বাতাসে আগুনের হল্কা, তাপমাত্রা বাড়বে আরও অন্তত এক সপ্তাহ

0

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে এবং আবহাওয়া অফিস বলছে তাপমাত্রা বাড়ার এ প্রবণতা আরও অন্তত এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিস তাদের পূর্বাভাসে রবিবার জানিয়েছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। রবিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দেশে বর্তমান ‘হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার’ দাবদাহ বইছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ। ফলে সকালের দিকে তাপমাত্রা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। “রাতের তাপমাত্রা এখনও কম। কিন্তু আগামী কয়েকদিনে রাতের তাপমাত্রাও বাড়তে পারে। মোট কথা এখন যে তাপমাত্রা আরও সপ্তাহখানেক সময়জুড়ে ধীরে ধীরে বাড়বে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন রশীদ।

এদিনে আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকতে পারে। বজলুর রশীদ বলছেন এখন বৃষ্টি নেই কারণ বৃষ্টি হয়ে গেছে মার্চ মাসে আর এপ্রিল এমনিতেই উষ্ণতর মাস। এসব মিলিয়ে দাবদাহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তাপমাত্রায় নতুন নতুন রেকর্ড
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে দাবদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ২০২১ সালের ২৫শে এপ্রিল ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয়েছিলো বাংলাদেশে এবং ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে এর আগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে একটি জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি ৫ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং সেটি পরপর পাঁচদিন চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বলা হয়। তবে অনেক দেশ এটিকে নিজের মতো করেও সংজ্ঞায়িত করেছে।

তাপমাত্রা কতটা হলে হিটওয়েভ
সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ওঠলে শরীর নিজেকে ঠাণ্ডা করার যে প্রক্রিয়া সেটিকে বন্ধ করে দেয়। যে কারণে এর বেশি তাপমাত্রা হলে তা স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে যে তারা তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি হলে সেটিকে মৃদু হিটওয়েভ, ৩৮-৪০ ডিগ্রি হলে মধ্যম মাত্রার হিটওয়েভ, ৪০-৪২ডিগ্রি হলে তীব্র বা মারাত্মক এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে অতি তীব্র হিটওয়েভ হিসেবে বিবেচনা করে।

এ হিসেবে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে এখন মধ্যম মাত্রার দাবদাহ বইছে। প্রায় একই ধরনের দাবদাহ বইছে রাজশাহীর ওপর দিয়েও। সেখানে আজ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। “ভাই অসহ্য গরম। মনে হয় গায়ের চামড়া উঠে যাচ্ছে,” চুয়াডাঙ্গা থেকে বলছিলেন সফি উদ্দিন আহমেদ নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবে বাংলাদেশে হিটওয়েভ বা দাবদাহ শুরু হয় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে। তবে এটা আসলে পুরোটা নির্ভর করে মানবদেহের খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ওপর। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণায় ৪৪ বছরের তাপমাত্রার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হয়।

আবার অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের কোন কোন জায়গায় বেশ গরম অনুভূত হলেও সেটি তাপপ্রবাহ বা হিটওয়েভের পর্যায়ে যায় না। তবে সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনায় আবহাওয়া অধিদপ্তর দেখেছে যে মধ্য মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আবহাওয়ার বিচিত্র আচরণ
বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই আবহাওয়ার ‘বিচিত্র আচরণ’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে সাধারণত গরম অনুভূত হবার কথা থাকলেও এবার প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টির সাথে ঝড়ের খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিনমাসকে বর্ষা পূর্ব মৌসুম হিসেবে ধরে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই তিনমাস সাধারণত স্থানীয়ভাবে বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টি নামায়। কখনো কখনো দেশের বাইরে আশপাশ থেকেও বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে এসে বাংলাদেশের আকাশে পরিপক্বতা লাভ করে। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।

কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছে, এবারে মার্চ মাসে বেশ ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে। যেটার ধরন অন্যবারের চেয়ে আলাদা।

আবার বাংলাদেশে এপ্রিল মাসকে কালবৈশাখীর সময় বলে মনে করা হয়। ১৯৮১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এপ্রিল মাসে ১২ থেকে ১৩ দিন দেশজুড়ে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। একই সাথে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়।

দাবদাহ : যেভাবে সুস্থ থাকবেন
মানবশরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে, কিন্তু তার জন্য সুদিং বা শীতল তাপমাত্রা হচ্ছে ২০ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আর বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মানবশরীরের সহ্যসীমার মধ্যে থাকে।

কিন্তু তাপমাত্রা এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে মানবশরীর সহ্য করতে পারে না। তখন নানারকম অস্বস্তি ও সমস্যা দেখা যায়। এমনকি তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মানুষের হিটস্ট্রোক হবার আশংকা বেড়ে যায়।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশি করে পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। আর সূর্যের আলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। এছাড়া ঘর ঠাণ্ডা রাখা ও ঢিলে ঢালা আরামদায়ক সুতি কাপড়ের পোশাক পরিধানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

যেসব অসুস্থতা হতে পারে
প্রচণ্ড গরমে সাধারণত অতিরিক্ত ঘামের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়ে মানুষের শরীর। পানিশূন্যতার কারণে দ্রুত দুর্বল হয়ে যায় মানুষ। এছাড়া বদহজম ও পেট খারাপ এবং পানি-বাহিত নানা ধরনের রোগ বালাই হতে পারে এ সময়।

রোটাভাইরাসসহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত পাতলা পায়খানা হতে পারে। মাথা ঘোরা এবং বমিভাব, কারো ক্ষেত্রে বমিও হতে পারে। এধরনের অসুস্থতা সাধারণত একটু সতর্ক হলে এড়িয়ে চলা সম্ভব।

কিন্তু অতিরিক্ত গরমে যদি কারো শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঝিমঝিম-ভাব হয় কিংবা মাথা ঘুরে পড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here