গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার হুমকি ট্রাম্পের, কানাডাকে বানাতে চান যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য

0

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পানামা খালের পুনর্দখল এবং গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে চান নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এজন্য তিনি সামরিক শক্তি প্রয়োগেও দ্বিধা করবেন না।

মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক গত নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়কে সার্টিফাই করার পরদিন ৭ জানুয়ারি ফ্লোরিডায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে ‘গালফ অব মেক্সিকো’র নাম পাল্টে ‘গালফ অব আমেরিকা’ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

শুধু তাই নয়, আগে থেকেই বলে আসা কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম স্টেটে পরিণত করার কথাও জোর দিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিলেন।

ফলে নিকট প্রতিবেশীই শুধু নয়, ইউরোপের সাথেও বিদ্যমান সম্পর্কে বড় ধরনের ফাটলের আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।

সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন যে, পানামা খালের পুনর্দখলে এবং গ্রিনল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখন সে ব্যাপারে কোনো অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাচ্ছি না। তবে কিছু করতে হলে হয়তো সে ধরনের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। কারণ, পানামা খালটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নেই গ্রিনল্যান্ডকে আমাদের খুবই প্রয়োজন।

ট্রাম্প যখন সংবাদ সম্মেলনে গ্রিনল্যান্ডকে দখলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করেন, ঠিক সেই সময়ে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফর করছিলেন।

এদিকে, কানাডাকে ৫১তম স্টেটে পরিণত করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগে আগ্রহী নন ট্রাম্প। তবে কানাডাকে অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তিনি। কানাডার পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করলে ২৫% হারে ট্যাক্স গুণতে হবে, এটি আগেই উল্লেখ করেছেন।

করোনা পরবর্তী সংকট থেকে কানাডাকে ঘুরে দাঁড়াতে যথাযথ নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। এরপর ট্রাম্প আরও জোরালোভাবে কানাডাকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য মন্তব্য করছন।
 
ট্রাম্প দাবি করেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। সেজন্যেই ‘মেক্সিকো উপসাগর’কে ‘আমেরিকা উপসাগর’ হিসেবে নামকরণ করতে হবে। কারণ, এই সাগরের সুন্দর একটি বলয় রয়েছে। নামকরণটিও হবে অত্যন্ত সুন্দর।

ট্রাম্পের এসব মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’এ প্রগতিশীল রাজনীতিকরা উল্লেখ করেছেন, ডেনমার্কের দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড এবং পানামা খালের দখল নেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প অত্যন্ত বোকামি করেছেন। বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভয়ংকর ও বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করবে।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিটে ফ্রেডারিক্সন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, সেই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে রাশিয়ার বিপরীতে।

গ্রিনল্যান্ডের প্রিমিয়ার মুতে বি এগেডে লিখেছেন, গ্রিনল্যান্ডের মালিক হচ্ছেন, সেখানকার অধিবাসীরা। আমাদের ভবিষ্যৎ এবং স্বাধীনতার লড়াইয়ের ব্যাপারটিও আমাদেরই। তাই গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা অথবা নেতৃত্বের ব্যাপারটি নির্ধারিত হবে আমাদের মতো নাগরিকের দ্বারাই।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণার মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ কানাডাকে আবারো পুরনো প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, কানাডার জনগণ চান তাদের দেশ যেন আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে ওঠে। কানাডাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভর্তুকি দেওয়া দরকার, তা আমেরিকা আর সহ্য করতে পারে না। জাস্টিন ট্রুডো এটি জানেন এবং সেই জন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, যদি কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তাহলে সেখানে কোনো শুল্ক থাকবে না, কর অনেকটাই কমে যাবে এবং তারা রাশিয়ান ও চীনা জাহাজের হুমকি থেকে সম্পূর্ণরুপে নিরাপদ থাকবে। একসঙ্গে এটা একটি মহান জাতি হবে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম স্টেটের গভর্নর হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও ট্রুডো সে প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন।

ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কানাডাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছিল, কানাডা সীমান্ত থেকে অবৈধ মাদক ও অভিবাসীদের পাঠানো বন্ধ না করলে কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশ করে নেয়ার ‘ধারণাটি দারুণ’ এবং কানাডার অনেক নাগরিক সেটি চান বলেও দাবি করেছেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এর আগে, ১৮ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, কেউ উত্তর দিতে পারে না যে, কেন আমরা কানাডাকে বছরে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি ভর্তুকি দেই? অনেক কানাডিয়ান চান কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাক। এটি কর ও সামরিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে অনেক খরচ বাঁচাবে। আমি মনে করি, এটি একটি দারুণ ধারণা। ৫১তম অঙ্গরাজ্য?

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন, গ্রিনল্যান্ডের দখল নেওয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের পর ট্রাম্প অন্য কোনো মানচিত্রে দৃষ্টি প্রসারিত করতে পারেন বলেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ন্যাটোর অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিতে চাননি। এমনকি সম্পর্কচ্ছেদের হুমকিতে কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here