সনাতনী পদ্ধতিতে কুয়াকাটায় শুঁটকি উৎপাদন

0

রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় উৎপাদন করা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি। চাহিদা ভালো থাকায় কুয়াকাটা থেকে প্রতিবছর বিক্রি হয় কোটি টাকার শুঁটকি। কিন্তু এখনও সনাতনী পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয় এখানকার শুঁটকি। লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় বলে এর সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। 

শীত মৌসুমের প্রথম দিকে শুরু হয় সাগরপাড়ের শুঁটকি পল্লীগুলোতে প্রক্রিয়াজাত করণের মহাকর্মযজ্ঞ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সামান ভাবে এ কাজে যুক্ত রয়েছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সাথে উৎপাদিত শুঁটকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, সাগর পাড়ের গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, ধুলাসারসহ মহিপুরের নিজামপুরসহ বিভিন্ন স্থনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শুঁটকির ব্যবসা। মৌসুমের শুরুতেই একেকটি স্পটে ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক উপায়ে শুকায় সামুদ্রিক মাছ। কেউ মাছ আহরণ শেষে ধোয়ার কাজ করছেন। কেউ বড় মাছ কাটছেন। কেউ লবন মিশিয়ে বাঁশের তৈরি মাচায় কিংবা বিভিন্ন স্থানে বিছিয়ে রাখছেন। কেউ বা আবার শুকানো মাছ প্যাকেট করছে। এসব মাছ স্থানীয় বাজার সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর জন্য ব্যস্ত রয়েছে শ্রমিকরা। 

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের দেয়া তথ্য মতে- কুয়াকাটার আশেপাশে গড়ে ওঠা শুঁটকি পল্লীতে প্রায় ২৫ হাজার জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, কুয়াকাটায় ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক দোকানে অন্তত ৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক শুটকি মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে লইট্টা, ছোট চিংড়ি মাছের শুঁটকির রয়েছে বেশি চাহিদা। এছাড়াও ছুঁড়ি, কাচকি, বৈরাগী, রূপচাঁদা, কোড়াল, চ্যাপা, বাঁশপাতা, সুরমা, রাম চেলা, চাপিলা, লাক্ষ্যা, টোনা, ফাইস্যা, চান্দা, পোয়া, বাইন, পাবদা, ভেটকি, কোরাল, ভোল, ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি পাওয়া যায়। 

তারা আরও জানান, পর্যটক-দর্শনার্থীরাও প্রতিদিন কিনে নিচ্ছেন এখানকার শুটকি। প্রাকৃতিকভাবে শুকানোর ফলে আলাদা স্বাদ থাকায় শুঁটকির ১২ মাসই চাহিদা রয়েছে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়তো। এতে শ্রমিক এবং জেলেদেরও কষ্ট কমে যাবে, সবাই লাভবান হতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

পর্যটক রাহায়েল আহমেদ জানান, এখানকার শুঁটকির নাকি আলাদা স্বাদ, তাই বেশ কিছু শুঁটকি কিনেছি। অপর এক পর্যটক মুরাদ বলেন, বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটায় এসে বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখলাম। ভালই লেগেছে। এখানে টাটকা শুঁটকি পেয়েছি। তাই যাবার সময় ৮ কেজি বিভিন্ন মাছের শুঁটকি কিনেছি। এরমধ্যে লইট্টা ও চিংড়ি বেশি। এসব শুঁটকির ঢাকায় দামও বেশি, এখানে সস্তা দামে কেনা যাচ্ছে।

শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন, শুঁটকিতে কোনও ধরনের কীটনাশক ব্যবহৃত হয় না। প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে শুঁটকি করা হয়। দেশের বাইরেও রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। 

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সারা দেশে কুয়াকাটার শুঁটকির সুনাম রয়েছে। উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here