সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের উত্তরের সাইদনায়া কারাগার দেশটির মানুষের ওপর স্বৈরশাসনের নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিশেষত, ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এই কারাগারে ঘটে যাওয়া অন্যায় হত্যাকাণ্ড, অত্যাচার এবং জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে।
গত মাসের শুরুতে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দামাস্কাস দখল করার পর সাইদনায়া কারাগার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং বন্দীদের মুক্তি দেয়। এই কারাগারে ১৯৮০-এর দশক থেকে অনেক বন্দী আটক ছিলেন। বন্দীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ADMSP জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা ৪,০০০ জনেরও বেশি বন্দীকে মুক্ত করেছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের দুর্বল এবং ক্ষীণকায় ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে অনেকেই এতটাই দুর্বল ছিলেন যে, নিজের পায়ে হেঁটে কারাগার ছেড়ে যেতে পারেননি। সাইদনায়ার ভয়াবহ চিত্র এক মুহূর্তে সবার সামনে উন্মোচিত হয়।
শুক্রবার ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার নতুন শাসকদের সাথে সাক্ষাৎকালে সাইদনায়া কারাগার পরিদর্শন করেন। তাদের সাথে সিরিয়ার হোয়াইট হেলমেটস দলও ছিল।
১৯৮০-এর দশকে নির্মিত সাইদনায়া প্রথমে রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এটি সিরিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর কঠোর দমননীতির প্রতীক হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ জানায়, এই কারাগারে হত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার, এবং জোরপূর্বক নিখোঁজ করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
২০১৭ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ‘হিউম্যান স্লটারহাউস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সাইদনায়ায় হাজার হাজার বন্দীর নির্বিচার হত্যার তথ্য প্রকাশ করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, সাইদনায়ায় একটি দাহকেন্দ্র চালু ছিল, যেখানে হাজারো বন্দীর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ৩০,০০০ বন্দীকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে ADMSP জানিয়েছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছিল চিকিৎসার অভাব ও খাদ্য সংকটে। আসাদ সরকার লাশ সংরক্ষণের জন্য লবণকক্ষ নির্মাণ করেছিল, যা ছিল একটি অস্থায়ী মর্গ।
২০২২ সালে ADMSP প্রথমবারের মতো এই লবণকক্ষের বিবরণ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালে এই লবণকক্ষ তৈরি করা হয়, যা ছিল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তাক্ত বছরগুলোর একটি।
সাইদনায়ায় বহু বিদেশি নাগরিকও আটক ছিলেন। জর্ডানের ওসামা বশির হাসান আল-বাতায়না ৩৮ বছর বন্দী থাকার পর মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার সময় তিনি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন।
লেবাননের সুহেইল হামাউই ৩৩ বছর বন্দী ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর নিজ দেশে ফিরে যান।
বর্তমানে সাইদনায়া কারাগার ফাঁকা এবং হোয়াইট হেলমেটস দল জানিয়েছে, সেখানে আর কোনো বন্দী পাওয়া যায়নি। সিরিয়ার ইতিহাসে নিষ্ঠুরতার এক ভয়াবহ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল