নাটোরের বিএনপি কর্মী এনায়েত করিম রাঙ্গাকে জুলাই বিপ্লবের তিনটি হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে তার আপন ভাতিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কথিত সমন্বয়ক ফয়সাল আহম্মেদের বিরুদ্ধে। তিন দিন থেকে কারাগারে আটক থাকা বিএনপি কর্মী রাঙ্গার মুক্তি ও ষড়যন্ত্রকারী আপন ভাতিজা ফয়সাল আহম্মেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে সোমবার দুপুরে নাটোরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেছে রাঙ্গার স্ত্রী, সন্তান, বোন ও পরিবারের সদস্যরা। নাটোরের সিংড়া থানা পুলিশ গত শনিবার রাতে তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে এনায়েত করিম রাঙ্গাকে গ্রেফতার করে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আদালতে পাঠায়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গার স্ত্রী উম্মে সালমা পাপিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী সারাজীবন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। জুলাই বিপ্লবে নিজের জীবন বাজী রেখে নিজের শিশুপুত্রসহ ঢাকার সকল সভা সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনে আহত ২০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন। এখন দুভার্গ্যজনক ভাবে তার স্বামীর আপন ভাতিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল আহম্মেদ পারিবারিক বিরোধের জের ধরে জুলাই বিপ্লবের পর নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে নিজের চাচাকে ঢাকার সূত্রাপুর থানায় একে একে তিনটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। ফয়সালের বাবা আবু জাহিদও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তারা বাবা ছেলে উভয়ে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে সখ্যতা গড়ে তার আমলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বই সরবরাহের কাজ পান। সেই কাজের সুবাদে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
গত নির্বাচনের আগে পলককে নিয়ে এই ছাত্রলীগ নেতা তিনটি ডকুমেন্টারি তৈরী করেও প্রচার করেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে দাপট দেখানো ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল এই পরিবর্তিত সময়ে এসেও পরিবারের ও আশেপাশের মানুষকে সমন্বয়ক সেজে বিভিন্ন মামলায় আসামি বানিয়ে হয়রানী করছেন। ফয়সাল শুধু চাচা রাঙ্গাকে নয়, তার গ্রামের আরেক ভাই আব্দুল আজিজকেও ১৯ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাগর হত্যা মামলায় ৫১ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনিও এই ঘটনার জন্য ফায়সাল আহমেদকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, এই জীবনে এখন পর্যন্ত একবারের জন্যও কখনো তিনি ঢাকায় যাননি। উম্মে সালমা পাপিয়া বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদের বাবা-চাচাদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালের বাবা তার সৎ ভাই তৈয়ব আলীকে প্রকাশ্যে গুলি করেন।
এ ঘটনায় হত্যা চেষ্টার মামলায় তার (ছাত্রলীগ নেতার) বাবা গ্রেফতার হয়ে ২১ দিন জেলখাটার পর তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলকের সহযোগীতায় ছাড়া পান। এই ঘটনার সময় রাঙ্গা নির্যাতিত তৈয়ব আলীর পক্ষে থাকায় এখন তাকে ভাতিজা ফয়সাল শায়েস্তা করার জন্য একের পর হত্যা মামলায় আসামি করাচ্ছেন। সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেছেন, এনায়েত করিম রাঙ্গা সারাজীবন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ঢাকায় তিনি একটি সিকিউরিটি ফার্ম খুলে বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তী কর্মী সরবরাহ করেন। এলাকার অনেক মানুষকে ঢাকায় নিয়ে চাকুরীও দিয়েছেন। রাঙ্গাকে মিথ্যা অভিযোগে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতা কথিত সমন্বয়ক ফয়সাল আহম্মেদ চাচাকে মামলায় জড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন না করতে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, তিনি দ্রুত তার চাচা রাঙ্গাকে এসব মামলা থেকে নাম কাটানোর চেষ্টা করবেন।