শাহজালালের গুদামে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ

0

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো গুদামে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। অনিরাপদভাবে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ পড়ে থাকায় যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে ঝুঁকি এড়াতে গুদামে পড়ে থাকা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে দ্রুত হস্তান্তরের চেষ্টা করছে ঢাকা কাস্টমস।

এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে কাস্টমস। কিন্তু নানা জটিলতায় সেগুলো সরানো যাচ্ছে না। ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোবারা খানম এই পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গুদামে কিছু অস্ত্র পড়ে আছে। অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেওয়ার জন্য এনবিআরের কাছে অনাপত্তি চাওয়া হয়েছে। সেনা সদরের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। এনবিআর অনাপত্তি দিলেই অস্ত্রগুলো প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

বিপুল অস্ত্র জমা পড়ে থাকার পরও আগে কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অস্ত্রগুলো সব জমা পড়েছে আগের কমিশনারের আমলে। আমি গুদাম ক্লিয়ার করতে গিয়ে অস্ত্রগুলো দেখতে পাই। এর পরই এসব অস্ত্র হস্তান্তরের চেষ্টা করছি।’ পরে ঢাকা কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কাস্টমসের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, কাস্টমসের গুদামে বর্তমানে ৭৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৯৭ হাজার ৮৩৫টি গোলাবারুদ, ১৫ কেজি বন্দুকের গুলি, ছয়টি খালি ম্যাগাজিন, চারটি এয়ারগান ও পাঁচটি তরবারি পড়ে আছে। কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিম, এয়ারফ্রেইট ইউনিট এসব অস্ত্র আটক করেছিল। বিমান ডিসপোজাল গুদামে ইনভেন্ট্রির সময় পরিত্যক্ত অবস্থায়ও কিছু অস্ত্র পাওয়ার পর তা জব্দ করে কাস্টমস।

জানা গেছে, এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ কোরিয়া, জার্মানি ও ইতালির তৈরি। এসব অস্ত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেতে ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এসব অস্ত্রের বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী। অনেক অস্ত্রে মরিচা ধরেছে, কিছুসংখ্যক ভেঙেও গেছে। নতুন করে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন অস্ত্রের সংখ্যা কম।

ঢাকা কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টমস চাইলেই এসব অস্ত্র নিলাম কিংবা ধ্বংস করতে পারবে না। ফলে এগুলো প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে প্রক্রিয়াটি জটিল। এগুলোর নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এসব অস্ত্র সেনাবাহিনী বা অন্য কারো পক্ষে ব্যবহারের সুযোগ কম। একমাত্র সমাধান হলো ধ্বংস করা। আর এটি করতে হবে সেনাবাহিনীর সহায়তায়। কারণ তাদের কারিগরি দক্ষতা রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত এসব অস্ত্র সেনাবাহিনীকে দেওয়া হলে তারা নিরাপদে এগুলো ধ্বংস করতে পারবে। এত বিপুলসংখ্যক বিপজ্জনক পণ্য দীর্ঘদিন বিমানবন্দরের ভেতরে পড়ে থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) নির্দেশনা অনুযায়ী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের টেকনিক্যাল নাম উল্লেখ করাসহ বিভিন্ন বিধান মানার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে পণ্যগুলো সঠিকভাবে গুদামজাত হয় না। এতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 ক্ষতিকারক পণ্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করছে মর্মে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলতে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ‘এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অনুপ কুমার তালুকদার।

নাম প্রকাশ না করে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আর্মড ফোর্সেস বিভাগ এগুলো ডিসপোজাল করবে। কিছু জটিলতার কারণে এখনো হস্তান্তর করা যায়নি। ডিসপোজালের জন্য কাস্টমসের যে মালপত্র রয়েছে, সেগুলোও পড়ে আছে বিমানবন্দরে। সবাই বিমানবন্দরকে গুদাম বানিয়ে ফেলেছে। প্রতি মাসের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে যার মালপত্র সে যদি না নেয়, আমাদের কী করার আছে!’

সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here