সম্প্রতি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সম্মত হয়েছে ইরান ও সৌদি আরব। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সে বিষয়ে বৈঠকও করেছেন। আর পুরো ব্যাপারটিতে মধ্যস্থতা করছে চীন।
অথচ বিগত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে এই দুই দেশের ছিল সাপ নেউলে সম্পর্ক। দুই দেশের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। মার্কিন মদদপুষ্ট সৌদি ইরানকে দমনে সব ধরনের ব্যবস্থাই নিয়েছে। যার পরিণাম ভোগ করেছে গোটা সৌদি আরব। বিশেষ করে ইয়েমেনের মতো দেশগুলো এই দ্বন্দ্বের চড়া মাশুল গুনছে, এখনও গুনছে।
২০১১ সালে শুরু হয়েছিল সিরিয়া লড়াই। এর একদিকে ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। যাকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। অন্যদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছিল সৌদি আরব।
সেই সংঘাতে বাশারের পক্ষে আছে রাশিয়া আর বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার ইরান-সৌদি এক ছাতার নিচে আসায় পাল্টে যেতে পারে সিরিয়ার পটভূমি। জানা গেছে, সিরিয়াকে আরব লিগে ফেরানোর উদ্যোগ নেবে সৌদি।
যদিও সেখানে একটা ত্রিমুখী বাধা আছে। কারণ সৌদির সাথে আবার সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় ইসরায়েল। যারা নিয়মিত ইরান সমর্থিত বাহিনীকে লক্ষ্য করে সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে আসছে। সৌদি-ইরান সমঝোতা এবার ইসরায়েলকে খানিকটা বিপাকে ফেলতে চলেছে বৈকি।
লেবাননের রাজনীতিতেও আছে সৌদি ইরান সম্পর্কের প্রভাব। দেশটির সুন্নি সরকারকে সমর্থন দেয় রিয়াদ। বিপরীতে ইরান সমর্থন করে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে। গত বছরও হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ অভিযোগ করেছেন, তার দেশের সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে সৌদি।
সাদ্দাম হোসেনের পতনের ইরান প্রতিবেশী ইরাকে প্রাণপণ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইরাকের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে মদদ দিয়ে চলেছে তেহরান। বিশেষ করে শিয়া রাজনৈতিক দলগুলো বেড়ে উঠছে ইরানের ছত্রছায়ায়। অন্যদিকে সুন্নিদের মদদ দিয়ে আসছে সৌদি আরব। যেখানেও ইরান-সৌদির একধরনের ছায়াযুদ্ধ চলছে।
সৌদি-ইরান সংঘাতের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ইয়েমেন। দেশটিতে ২০১৫ সাল থেকে হামলা চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। যাদের পেছন থেকে সমর্থন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি ইয়েমেনের আবদ-রাব্বু মানসুর হাদিকে সমর্থন করে। বিপরীতে ইরান সমর্থন দিচ্ছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিকে।
এই হুথিরা বেশ কয়েকবার সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলাও চালিয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে ২৪ হাজারের বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে সৌদি। দেশটির দেড় কোটির বেশি মানুষ ভুগছে খাদ্য সংকটে। সেখানে একরকম দুর্ভিক্ষই চলছে হুথি সৌদি দ্বন্দ্বের কারণে। সেটাই মূল সৌদি-ইরানের ছায়া যুদ্ধের বৃহৎ মঞ্চ। এই সংঘাতে সাত বছরে ইয়েমেনের ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইরান-সৌদির সমঝোতা তাই এসব দেশে শান্তি ফেরার খানিকটা সুবাতাসও দিচ্ছে। তবে সেই শান্তির আশাও শঙ্কামুক্ত নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্র: আল জাজিরা