পয়লা বৈশাখে আগামীকাল মেতে উঠবে বাঙালি

0

‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা’ কবিতার পংক্তিতে এভাবেই বাংলা নববর্ষ তথা বৈশাখকে আহবান জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আগামীকাল পয়লা বৈশাখ বঙ্গাব্দ ১৪৩১ এর প্রথম দিন। পুরনো দিনের সকল গ্লানি ও হতাশাকে পেছনে ফেলে পয়লা বৈশাখ থেকে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবে গোটা জাতি।

পান্তা ইলিশের সাথে আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের খাবার মুড়ি, মুড়কি, খই ও বাতাসাসহ নানা পদের বাঙালি খাবারে বাংলার ঘরে ঘরে জমে উঠবে বৈশাখ বরণের নানা আয়োজন। আজ শনিবার চৈত্র সংক্রান্তির মধ্য দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা। আজকের সূর্যটা পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে সারাদেশের মানুষ মেতে উঠে পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এদিন স্নান, দানের পাশাপাশি ব্রতও পালন করে।

অন্যদিকে, লোকজ মেলা, বিদায়ী বছরের দেনা পাওনা আদায়ে হালখাতার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্যসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি। এদিকে, আগামীকাল বাংলা নববর্ষ ১৪৩১কে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রমনার বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র।

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখ বরণের আয়োজন। রাগ সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয়ে এই আয়োজনে থাকবে একক গান, সম্মেলক গান, দলীয় একক নৃত্য, দলীয় নৃত্য ও পাঠ। এতে অংশ নেবে ১৭০ জন শিল্পী।  এরপর সকাল সোয়া নয়টায় চারুকলা অনুষদের আয়োজনে বরাবরের মতো অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।  এটি চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হবে এই শোভাযাত্রাটি। শোভাযাত্রায় যেকোনো ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতি এড়াতে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা।  অন্যদিকে, চ্যানেলা আই ও সুরের ধারা যৌথভাবে এবারও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৈশাখ বরণ করবে। এটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। এছাড়া বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত পয়লা বৈশাখের আয়োজন। আর নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে ফকির আলমগীরের হাতে গড়া সংগঠন ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী আয়োজিত বাংলা নববর্ষ বরণ।

এবারের শোভাযাত্রায় ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ( ডিএমপি)  পক্ষ থেকে এমন নির্দেশ আসার পর ক্ষোভে পুষছে উদীচীসহ বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।  আর ডিএমপির এই নির্দেশ না মানার ঘোষণা দিয়েছে উদীচী।  এরই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উদীচী। বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনের অনুষ্ঠান শেষ করার সরকার নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর শুরু হবে উদীচীর অনুষ্ঠান। 

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। “বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল” শিরোনামের এই প্রতিবাদী অনুষ্ঠান ছাড়াও সারাদেশে উদীচীর আয়োজনে সমমনা সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে যে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ উৎসব হয় তা যথানিয়মেই আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে উদীচী। আর সেসব আয়োজনে যথাযথ সহযোগিতা করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বানও জানাচ্ছে উদীচী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here