ভিয়েতনামের ট্রুং মাই ল্যান নামের এক শীর্ষস্থানীয় নারী ধনকুবের ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের মামলায় মৃত্যুদণ্ডর মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা এটি। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনিসহ কয়েক ডজন আসামির বিরুদ্ধে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যবসাকেন্দ্র হো চি মিন সিটিতে বিচার শেষে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ভ্যান থিন ফাট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান ল্যানকে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ ও ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। থান নিয়েন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই মামলায় ৮৪ জন আসামিকে তিন বছর থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ল্যানের স্বামী এরিক চু’কে ৯ বছরের এবং তার ভাতিজি যাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দেশটির আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকে কারো পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। আইনজীবীরা জানান, অনেকগুলো শেল কোম্পানি ও তার প্রক্সিদের মাধ্যমে ট্রুং সাইগন কমার্শিয়ালের ৯০ শতাংশেরও বেশি শেয়ারের মালিক হয়েছিলেন। এছাড়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি তার মনোনীত লোকদের ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর তার নিয়ন্ত্রিত শেল কোম্পানিগুলোকে শত শত ঋণ অনুমোদন করার ব্যবস্থা করতেন।
ট্রুং মাই ল্যানের বিরুদ্ধে দেশটির সাইগন কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, ঋণের ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পুনরুদ্ধার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই মামলায় ২ হাজার ৭০০ জনকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১০ জনসহ মোট ২০০ জন আইনজীবী ছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো, এই মামলার প্রমাণ মোট ১০৪টি বক্সে সংরক্ষিত আছে, যার ওজন ৬ টন। এই মামলায় ট্রুংসহ মোট ৮৫ জনের বিচার চলছে। যাঁদের সবাই নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
তবে আদালতে আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদিকে, বলা হচ্ছে কমিউনিস্ট দলের সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রংয়ের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত এই বিচারকাজ সবচেয়ে নাটকীয়।
নগুয়েন ফু ট্রং মনে করেন, চরম দুর্নীতির কারণে জনগণের ক্ষোভ কমিউনিস্ট দলের একচেটিয়া ক্ষমতার জন্য হুমকি। তিনি ২০১৬ সালে তৎকালীন ব্যবসাবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেন। এই অভিযানের অংশ হিসেবে দুজন প্রেসিডেন্ট ও দুই উপপ্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। শতাধিক কর্মকর্তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এখন তাঁদের দলে ঢুকলেন ধনকুবের এই নারী।