একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার আয়োজনে অ্যাশফিল্ড পার্কে ৩ মার্চ দিনভর মুখরিত ছিল সিডনি বইমেলা। ২০০৬ সালে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তারপর থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেশীয় আদলে এই মেলার আয়োজন চলছে।
সিডনি থেকে প্রকাশিত প্রভাত ফেরি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতায় বইমেলায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কথা সাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। এ মেলার জন্য সারা বছর মুখিয়ে থাকে এখানকার লেখক-পাঠকরা।
মেলায় সিডনি ও ক্যানবেরার বিপুল সংখ্যক সাহিত্য প্রেমী দর্শক, বইপ্রেমী ক্রেতা, শিশু-কিশোর-তারুন্য অংশ নেন। জায়গায় জায়গায় আড্ডা জমতে দেখা যায়। বই কেনার পাশাপাশি অনেকেই বই উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশি পাঠকের সঙ্গে কথা বলে, অটোগ্রাফ দিয়ে ও ছবি তুলে দিনভর স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ান আনিসুল হক।
বইমেলায় নিজের অনুভূতি নিয়ে আনিসুল হক বলেন, বই আর পাঠক সমাবেশের টানে আমি পৃথিবীর বহু দেশে গিয়েছি। ভেবেছিলাম অন্যান্য দেশের মতো সিডনিতেও ছোট পরিসরে বইমেলা হবে। কিন্তু আমার ভুল ভাঙে যখন মেলা প্রাঙ্গণে এসে দেখি এত বিশাল খোলা মাঠে প্রায় বাংলাদেশের মতোই আরেক টুকরো বাংলাদেশি একুশে বইমেলা।
এবারের বইমেলায় দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা লেখকদের বই প্রদর্শন করা হয় স্টলগুলোতে। সাহিত্যিক শাখাওয়াত নয়নের উপস্থাপনায় সিডনি প্রবাসী ১২ জন লেখকের বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। বইমেলা উপলক্ষে শাখাওয়াত নয়নের সম্পাদনায় ‘মাতৃভাষা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, মঞ্চনাটিকাসহ বিভিন্ন আয়োজন। বাংলাদেশি অনেক মুখরোচক খাবারের স্টলও ছিল।
একুশে একাডেমির শিল্পী গোষ্ঠীর সুমি দে, অমিয়া মতিন, পিয়াসা বড়ুয়ার নেতৃত্বে সিডনির বিভিন্ন বয়সীদের পরিবেশনা বই প্রেমী পাঠকদের মুগ্ধ করে। নির্মল্য চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ২১-এর পটভূমিতে রচিত নাটকটি সবার নজড় কাড়ে। সেই সাথে মঞ্চে সাহিত্যিক আনিসুল হকের সাথে সিডনির প্রখ্যাত কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্তের কথাপোকথন আলাদা সাহিত্য রস নিয়ে আসে দর্শকদের কাছে।
প্রথম বারের মতো ‘ভাষা দিবস আজীবন’ সম্মাননা লাভ করেন সিডনি বইমেলার প্রতিষ্ঠাতা নেহাল নেয়ামুল বারী, ‘ভাষা দিবস’ সম্মাননা লাভ করেন প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক ও সম্মাননা নেন শ্রাবন্তী কাজী। সবাই অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দীকির হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন। এই সময় সিডনির বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মো. সাখাওয়াৎ হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সবশেষে একুশে বইমেলার আয়োজক একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি আবদুল মতিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।