নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা। আবৃত্তির মধ্য দিয়েই বিভিন্ন সময়ে তৈরি করেছেন প্রতিবাদের ভাষা। তার বিরল কণ্ঠের মাধুর্যতা বিমোহিত করে অন্তরাত্মাকে। আবৃত্তিতে তৈরি করেছেন নিজস্ব ঢংও। তার দুঃসাহসী কণ্ঠ আজও ভয়হীন। দুরন্ত, দুর্নিবার এবং চির আপসহীন এ তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। ভালো লাগাটা জানতে চাই?
পদক নেওয়ার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী বলেছিলেন?
আমি বোধহয় সবচেয়ে কম কথা বলেছি। উঁনি একটি শব্দ বলেছেন, আমিও একটি শব্দ বলেছি। উঁনি বলেছেন, ‘থামা যাবে না কিন্তু!’। আমি প্রতিত্তরে বলেছি, ‘জি, থামবো না’-এই টুকুই কথা হয়েছে।
ফিতা-ক্যাসেট-সিডির যুগে শিমুল মুস্তাফাকে চিনত শুধুই তার কণ্ঠ শুনে…
এটা সত্যি। আমার প্রথমদিককার যে ক্যাসেটগুলো বেরিয়েছিল প্রায় ৪০টা ক্যাসেট, সেগুলোর কোনো জায়গায়ই আমার ছবি নেই। আমার সিডিতেও আমার ছবি নেই। আসলে আমি কখনোই মনে করি না যে, আমার চেহারাটাই মুখ্য ব্যাপার। মানুষকে কবিতাপ্রেমী করা, কবিতার প্রতি আগ্রহ তৈরি করার জন্য, গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কবিতাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যা চিন্তাধারা ছিল সেটার মধ্য দিয়ে এগিয়েছি। অনেকেই জানত যে, শিমুল মুস্তাফা একটা রহস্য। তাকে দেখা যায় না। এটাও হয়তো আমার ছোটবেলার রহস্য-উপন্যাস পড়ার মতো একটা ব্যাপার ছিল। আমি আমার কর্মটাকে প্রকাশ করব, আমাকে প্রকাশ করব না। পরবর্তী পর্যায়ে মিডিয়ার কারণে, টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করতে করতে আমাকে অনেকে চিনে গেছে। আমি বিখ্যাত হওয়ার জন্য কখনোই কবিতা পড়িনি, মানুষের ভালোবাসার তাগিদে কবিতা পড়েছি।
বৈকুণ্ঠ সংগঠন, অনলাইন প্ল্যাটফরম শিমুলের পাঠশালার কার্যক্রম কেমন চলছে?
অনেক ভালো। এখন যেমন অনেক শিশু আমার ছাত্র। সারা পৃথিবীর অনেক শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণির কবিতাপ্রেমী আমার অনলাইন প্ল্যাটফরম শিমুলের পাঠশালায় কবিতা শিখছে। প্রতি মাসে ৩০০-৪০০ ছেলেমেয়ে কবিতার প্রতি সম্পৃক্ত হচ্ছে। আর বৈকুণ্ঠর সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা নিজস্ব গতিতেই চলছে। ৩৮ বছর ধরে বৈকুন্ঠ চালাচ্ছি। এখান থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আজকে কবিতা পড়ছে। এটা কিন্তু ভালো লাগার।
তারকাদের নেতা হওয়ার আকাঙ্খা থাকে। আপনারও নেতা হওয়ার ইচ্ছা আছে?
নেতা হওয়া তো খারাপ না। নেতা হওয়া অবশ্যই দরকার। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজন নেতা ছিলেন বলেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
শিমুল মুস্তাফা কেমন?
আমার মধ্যে দ্বৈতসত্তা আছে। আমি একভাবে চলি, আর ভিতরে আমি অন্য মানুষ। মনে হয়, জীবনে আরেকরকম হলে মনে হয় ভালো হতো। মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমি চাষাভূষা হলে বোধহয় ভালো ছিল। আমি খুবই গ্রাম্য মানসিকতা নিয়ে থাকতে পছন্দ করি।